Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeপ্রযুক্তি জগৎসাড়ে তিন শ’ কোটির বেশি ব্যবহারকারীর হাতে যে অপারেটিং সিস্টেম

সাড়ে তিন শ’ কোটির বেশি ব্যবহারকারীর হাতে যে অপারেটিং সিস্টেম

২০০৭ সালের ৫ নভেম্বর প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেয় একটি শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। সেদিন তারা উন্মোচন করে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের নতুন অধ্যায় — অ্যান্ড্রয়েড। প্রথমে এটি বেটা সংস্করণ হিসেবে চালু হলেও, এর মাধ্যমেই স্মার্টফোন জগতের এক বিপ্লবের সূচনা ঘটে। অ্যান্ড্রয়েডের বাণিজ্যিক সংস্করণ প্রকাশিত হয় পরের বছর, ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, যখন বাজারে আসে ‘এইচটিসি ড্রিম’ নামের প্রথম অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোনটি।

অ্যান্ড্রয়েডের যাত্রা শুরু হয়েছিল আরও আগেই। ২০০৩ সালে অ্যান্ডি রুবিন, রিচ মিনার, নিক সিয়ার্স ও ক্রিস হোয়াইটের নেতৃত্বে ‘অ্যান্ড্রয়েড ইনকরপোরেটেড’ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে তাদের লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল ক্যামেরার জন্য একটি বিশেষ অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা। তবে সময়ের সঙ্গে বাজারের চাহিদা ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে তাঁরা দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেন স্মার্টফোনের দিকে।

২০০৫ সালে গুগল অ্যান্ড্রয়েড ইনকরপোরেটেডকে অধিগ্রহণ করে নেয়। এরপরই এই প্রযুক্তিকে নতুনভাবে রূপ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। গুগল এটি ওপেন সোর্স ভিত্তিক করে, যা এর জনপ্রিয়তার মূল কারণ হয়ে ওঠে। লিনাক্স কার্নেলের ওপর নির্মিত এই অপারেটিং সিস্টেমকে অ্যাপাচি লাইসেন্সের অধীনে উন্মুক্ত করে দেয় গুগল। এর ফলে সারা বিশ্বের ফোন নির্মাতারা নিজেদের পছন্দমতো অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ ব্যবহার ও পরিবর্তন করার স্বাধীনতা পান।

অ্যান্ড্রয়েডের এই উন্মুক্ত নীতিই সেটিকে প্রতিযোগীদের—সিম্বিয়ান, ব্ল্যাকবেরি ও উইন্ডোজ ফোনের—চেয়ে এগিয়ে রাখে। গুগল এটি বিনা মূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দেয় স্যামসাং, মটোরোলা, এইচটিসি’র মতো নির্মাতাদের। ফলে অ্যান্ড্রয়েড দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। বিভিন্ন নির্মাতা নিজেদের ডিভাইসে এই সিস্টেমের কাস্টম সংস্করণ তৈরি করতে শুরু করে, যা ব্যবহারকারীদের আরও বেশি স্বাধীনতা দেয়।

অ্যান্ড্রয়েড শুধু একটি অপারেটিং সিস্টেম নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাপ্লিকেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলে। গুগল প্লে স্টোরের মাধ্যমে কোটি কোটি অ্যাপ ও গেমের ভান্ডার ব্যবহারকারীদের সামনে উন্মুক্ত করা হয়, যা স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।

২০১১ সাল নাগাদ অ্যান্ড্রয়েড বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেমে পরিণত হয়। পরের বছর এটি অ্যাপলের আইওএসকে ছাড়িয়ে মোবাইল প্রযুক্তির শীর্ষে উঠে আসে। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড একাই বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ৭৫ শতাংশ দখল করে আছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে তিন শ’ কোটিরও বেশি, যা একে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইনস্টলড অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েড বিভিন্ন সংস্করণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে। কাপকেক, ডোনাট, জিঞ্জারব্রেড, আইসক্রিম স্যান্ডউইচ, জেলি বিন ও কিটক্যাট—প্রতিটি সংস্করণই ব্যবহারকারীদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ১০ জুন প্রকাশিত হয় অ্যান্ড্রয়েড ১৬, যা আরও উন্নত অভিজ্ঞতা ও নতুন প্রযুক্তি সুবিধা নিয়ে এসেছে।

আজ অ্যান্ড্রয়েড শুধু একটি সফটওয়্যার নয়, এটি একটি ডিজিটাল বিপ্লবের প্রতীক। স্বল্পমূল্যের ডিভাইসেও উন্নত ফিচার ও স্মার্টফোন অভিজ্ঞতা এনে দিয়ে এটি বিশ্বের কোটি মানুষের হাতে প্রযুক্তিকে পৌঁছে দিয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments