ডিজিটাল যুগে তথ্য ও নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে নতুন পরামর্শ সেবা চালু করেছে একটি শীর্ষস্থানীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা শনাক্ত করতে পারবে এবং সেই অনুযায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির এই সেবা মূলত সাইবার ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান বড় হোক বা ছোট, নিরাপত্তার পর্যায় যাই থাকুক না কেন, ঝুঁকি মূল্যায়ন এখন অপরিহার্য। কারণ, সাইবার অপরাধীরা সবসময় নতুন কৌশল অবলম্বন করে আক্রমণ চালায়, আর সেই ঝুঁকি সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সহজ হয়।
নতুন এই পরামর্শ সেবার আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা মূল্যায়ন করতে পারবে। সংস্থাটি জানাচ্ছে, এই মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে পারবে তাদের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কে কোনো দুর্বলতা রয়েছে কি না, যা সাইবার হামলার জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। একইসঙ্গে, ব্যবহৃত ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলোর নিরাপত্তা ত্রুটি, নকশাগত সমস্যা বা সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্ত করার সুবিধাও থাকবে।
সাইবার নিরাপত্তা পরামর্শের এই সেবায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘থ্রেট হান্টিং’, ‘ইনসিডেন্ট রেসপন্স’ এবং সাম্প্রতিক সাইবার হামলার তথ্য বিশ্লেষণের মতো আধুনিক সুবিধা। এর ফলে, কোনো প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে অপরাধীরা কীভাবে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে বা সম্ভাব্য দুর্বলতা কোথায়, তা আগে থেকেই জানা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে, সাইবার আক্রমণের পরও প্রতিষ্ঠানটি তাদের নেটওয়ার্ক, তথ্য ও অ্যাপ্লিকেশনের সুরক্ষা যাচাই করতে পারবে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, র্যানসমওয়্যার আক্রমণের সবচেয়ে বড় কারণ হলো সফটওয়্যারের নিরাপত্তা দুর্বলতা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বের প্রায় ৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনো নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট, সফটওয়্যার বা সিস্টেমের ছোট একটি দুর্বলতাও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আজকের দিনে শুধু অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার বা ফায়ারওয়াল স্থাপন করাই যথেষ্ট নয়। এখন প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ সাইবার নিরাপত্তা মূল্যায়ন, তথ্য সুরক্ষার কৌশল নির্ধারণ এবং নিয়মিত সিস্টেম অডিট। নতুন এই উদ্যোগ তাই শুধু একটি সেবা নয়, বরং এটি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিনিয়োগ।
ডিজিটাল লেনদেন, ক্লাউড-ভিত্তিক কাজ, অনলাইন অ্যাক্সেস এবং দূরবর্তী কর্মপরিবেশের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের ডেটা, কর্মী ও ক্লায়েন্টের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে চায়, তাহলে সাইবার নিরাপত্তা পরামর্শ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
সাইবার অপরাধ প্রতিনিয়ত জটিল হয়ে উঠছে। তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উচিত প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করা। নতুন এই পরামর্শ সেবা সেই প্রচেষ্টারই একটি সম্প্রসারিত ধাপ—যা ভবিষ্যতের সাইবার হামলা প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।



