যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টনের বিরুদ্ধে সরকারি গোপন তথ্য অন্যের কাছে ফাঁস করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালতে দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, তিনি সংবেদনশীল সরকারি তথ্য নিজের দুই ঘনিষ্ঠ স্বজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর লেখা একটি বইয়ের জন্যই এই তথ্যগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক্তন প্রশাসনের সমালোচকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আর সেই ধারায় নতুন করে যুক্ত হলেন বোল্টন। তিনি হচ্ছেন তৃতীয় ব্যক্তি, যাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠল। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক এবং নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধেও একই ধরনের মামলা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বোল্টন ডিজিটাল মাধ্যমে তাঁর দুই স্বজনকে গোপন তথ্য পাঠিয়েছিলেন। এসব তথ্য তিনি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক, বিদেশি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা এবং গোপন গোয়েন্দা ব্রিফিং থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। মামলার নথিতে আরও বলা হয়েছে, ওই স্বজনদের সঙ্গে ডিজিটাল আলাপচারিতার সময় তিনি তাঁর আসন্ন বইয়ের জন্য তথ্য ব্যবহার করার ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। সেখানে বোল্টন তাঁদের ‘সম্পাদক’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
যদিও অভিযোগে ওই দুই স্বজনের নাম প্রকাশ করা হয়নি, তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারা বোল্টনের স্ত্রী ও কন্যা।
বিষয়টি নিয়ে এক বিবৃতিতে বোল্টন বলেন, তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডকে বৈধ প্রমাণ করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন এবং প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহার প্রকাশ করবেন। তাঁর আইনজীবী দাবি করেছেন, বোল্টন কোনো অবৈধ তথ্য বিনিময়ে জড়িত নন।
জানা গেছে, ২০২২ সালেই বোল্টনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল—যা ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগেই। মেরিল্যান্ডের ফেডারেল আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের আটটি এবং গোপনীয় তথ্য নিজের কাছে রাখার দশটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত।
এখনও পর্যন্ত তাঁকে আদালতে হাজির করার কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। বিচারকের বিবেচনায় চূড়ান্ত সাজা নির্ধারিত হবে।
এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রেসিডেন্টের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করেন, “তিনি একজন খারাপ মানুষ।”
বোল্টন প্রেসিডেন্টের প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি প্রশাসনের অন্যতম কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত হন। তিনি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসেবেও কাজ করেছেন। গত বছর প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনীতে তিনি প্রেসিডেন্টকে “রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অনুপযুক্ত” হিসেবে উল্লেখ করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত বোল্টন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দৈনন্দিন কাজকর্মের এক হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার তথ্য দুটি অননুমোদিত ব্যক্তির সঙ্গে ভাগাভাগি করেন। এসব তথ্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অত্যন্ত গোপনীয় নথিও ছিল।
এ ঘটনার মাধ্যমে আবারও আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক নীতিনির্ধারণে গোপনীয়তা রক্ষা ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার প্রশ্ন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বোল্টনের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আদালতের রায়েই।



