শিকাগো মহানগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি অভিবাসন কেন্দ্রের অমানবিক পরিবেশ নিয়ে দায়ের করা মামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, সেখানে আটক থাকা ব্যক্তিদের মানবিক সুবিধা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিচারকের নির্দেশ ১৪ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে অভিবাসন কেন্দ্রটির প্রতিটি আটক ব্যক্তিকে পরিষ্কার বিছানার মাদুর, পর্যাপ্ত ঘুমের জায়গা, সাবান, তোয়ালে, টয়লেট পেপার, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, মাসিক স্বাস্থ্যসামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে হবে।
বিচারক বলেন, “মানুষকে উপচে পড়া টয়লেটের পাশে ঘুমাতে বাধ্য করা যায় না। কেউ কারও শরীরের ওপর ঘুমাবে—এটিও গ্রহণযোগ্য নয়।”
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রের হোল্ডিং রুমগুলো প্রতিদিন অন্তত দুইবার পরিষ্কার করতে হবে। বন্দিদের অন্তত একদিন পর পর গোসলের সুযোগ দিতে হবে এবং প্রতিদিন তিনবেলা পূর্ণ আহার ও অনুরোধের ভিত্তিতে বোতলজাত পানি সরবরাহ করতে হবে।
এছাড়া, আদালত নির্দেশ দিয়েছেন যে আটক ব্যক্তিরা যেন কোনো ব্যয় ছাড়াই তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে পারেন। কর্তৃপক্ষকে ইংরেজি ও স্প্যানিশ—দুই ভাষায়ই প্রো বোনো (বিনামূল্যে) আইনজীবীদের তালিকা সরবরাহ করতে হবে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের নিষেধ করা হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের সই করানোর সময় যেন তারা কোনো নথি ভুলভাবে উপস্থাপন না করেন।
বিচারক শুনানিতে উল্লেখ করেন, আটক কেন্দ্রে নোংরা পানি, উপচে পড়া টয়লেট এবং অতিরিক্ত ভিড়ের মতো পরিস্থিতি “অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিষ্ঠুর” আচরণের সমান। তিনি বলেন, সাক্ষ্যদাতাদের বক্তব্য ছিল অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য এবং সেই অবস্থার বিবরণ তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
আদালত কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে, শুক্রবার দুপুরের মধ্যে এসব নির্দেশনা কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে, তার বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
এই বিষয়ে মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থার (আইসিই) পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মামলার শুনানিতে সরকারের পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, ব্রডভিউ এলাকার এই স্থাপনাটিতে কোনো বিছানা নেই, কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদি আটক কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত হয়নি। তবে গত কয়েক মাসে কার্যক্রমের কিছু উন্নয়ন ঘটেছে বলে তিনি জানান। তার ভাষায়, “এটি এখনো শেখার পর্যায়ে আছে,” এবং তিনি দাবি করেন, “বর্তমান পরিস্থিতি এতটা গুরুতর নয়।”
তবে আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আটক কেন্দ্রটির অবস্থাই প্রমাণ করছে যে সেখানে মানবিক মানদণ্ড রক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে আদালত মনে করেছে, তাৎক্ষণিক সংশোধন ছাড়া এসব অবস্থা অব্যাহত থাকলে তা আটক ব্যক্তিদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হবে।
এই রায়ের মাধ্যমে শিকাগো অঞ্চলের অভিবাসন আটক কেন্দ্রগুলোতে নতুন করে মানবিক আচরণের মানদণ্ড নিশ্চিত করার পথে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো।



