শিকাগো মহানগরীর উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি ফেডারেল ইমিগ্রেশন কেন্দ্রের সামনে শুক্রবার সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে যখন একদল বিক্ষোভকারী এবং আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মানবাধিকার কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এই স্থাপনাটিকে কার্যত একটি আটককেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে আসছেন এবং দাবি করছেন যে এখানে অমানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
কাউন্টির আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভাগ জানিয়েছে, মধ্যাহ্নের আগেই মোট ২১ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিতকরণ এবং সম্ভাব্য অভিযোগ নির্ধারণের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঘটনাস্থল ব্রডভিউ এলাকার মেয়র জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় মোট চারজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জন স্থানীয় পুলিশের সদস্য, একজন রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং একজন কাউন্টি শেরিফের কর্মকর্তা রয়েছেন। আহত তিনজনকে নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। মেয়রের ভাষ্য, “বহিরাগত বিক্ষোভকারীদের সহিংস আচরণ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমি বারবার অনুরোধ করেছি শান্তিপূর্ণভাবে মত প্রকাশ করতে, কিন্তু তারা হাতের পরিবর্তে শক্তি ব্যবহার করেছে।”
ঘটনার কিছু মুহূর্ত আগেও পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত ছিল। বিক্ষোভকারীরা গান গাইছিল, শ্লোগান দিচ্ছিল, কেউ কেউ প্রার্থনাও করছিলেন। সকাল প্রায় ১০টার দিকে প্রায় ৩০০ জনের একটি বড় দল পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে ইমিগ্রেশন কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হন। আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, তারা জানতেন যে এতে গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।
অনেক বিক্ষোভকারীর হাতে ছিল নানা পোস্টার, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—“সীমান্তের বাইরে মানবতা” এবং “স্বাধীনতা সবার অধিকার”—এমন বার্তা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের সদস্য ও কাউন্টি শেরিফের কর্মকর্তারা। সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় যখন নিরাপত্তা বলয়ের সামনে দাঁড়ানো সদস্যদের ওপর ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন কিছু বিক্ষোভকারী। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে।
ব্রডভিউ এলাকায় অবস্থিত এই ইমিগ্রেশন স্থাপনাটি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিয়মিত বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। বিশেষত শুক্রবারগুলোতে এখানে বড় আকারের সমাবেশ দেখা যায়। কর্মীদের অভিযোগ, “অপারেশন মিডওয়ে ব্লিটজ” নামে পরিচিত ফেডারেল উদ্যোগের কারণে শিকাগো মহানগর এলাকায় গত সেপ্টেম্বর থেকে অভিবাসন আইনের সন্দেহভাজন লঙ্ঘনের অভিযোগে ৩,২০০–র বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর অভিযানের পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আইনি চ্যালেঞ্জ এবং রাস্তার প্রতিবাদ দেখা গেছে। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, এই উদ্যোগ অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
শুক্রবারের ঘটনাটি সেই দীর্ঘমেয়াদি উত্তেজনার আরেকটি প্রকাশ, যা অভিবাসন নীতি ও মানবিক আচরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান বিতর্ককে আরও সামনে নিয়ে এসেছে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনলেও এলাকায় এখনো টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।



