যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শিশুদের হ্যালোইন প্যারেড চলাকালীন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অভিযানের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ফেডারেল এজেন্টরা অভিবাসনবিষয়ক এক অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে, যার ফলে শিশু ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার, শহরের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের ওল্ড আইরভিং পার্ক এলাকায়। সেখানে চলছিল শিশুদের সাজসজ্জাপূর্ণ হ্যালোইন প্যারেড। এ সময় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অভিবাসনবিষয়ক একটি অভিযান শুরু করলে পুরো এলাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, হঠাৎ করেই টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয় এবং কয়েকজন নাগরিককে জোরপূর্বক আটক করা হয়।
ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, কিছু বাসিন্দা যখন ঘটনাস্থলে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেন, তখন তাদের ওপরও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এমনকি শিশুদের উপস্থিতিতেও এজেন্টদের কঠোর পদক্ষেপে অনেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “আমাদের বাচ্চারা ভয়ে কাঁপছিল। ভাবতেও পারিনি এমন কিছু আমাদের পাড়ায় ঘটতে পারে।”
ঘটনার পর স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে হ্যালোইন প্যারেডটি নিকটস্থ একটি স্কুলে সরিয়ে নেন। অন্যদিকে, ফেডারেল দপ্তরের এক সহকারী সচিব এক বিবৃতিতে জানান, এজেন্টদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে “জননিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ” নিতে বাধ্য হতে হয়েছিল। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, অভিযানের লক্ষ্য ছিল এক মেক্সিকান নাগরিক, যিনি পূর্বে আক্রমণ মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “অভিযানের সময় এজেন্টদের ঘিরে ফেলা হয়, একাধিকবার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়, কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের প্রয়োজন হয়।”
ঘটনায় দুইজন মার্কিন নাগরিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা অভিযোগ অনুযায়ী ফেডারেল কর্মকর্তার কাজে বাধা দিয়েছিলেন। অভিযানের সময় স্থানীয় এক শ্রমিককেও আটক করা হয়, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তাঁর পরিবার জানায়, তিনি ঘটনাস্থলে শুধু ল্যান্ডস্কেপিং কাজ করছিলেন।
অভিযানের পর শহর প্রশাসন ফেডারেল কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায়। তারা জানিয়েছে, আদালতে এজেন্টদের কর্মকাণ্ড চ্যালেঞ্জ করা হবে।
এরই মধ্যে ফেডারেল আদালতের এক বিচারক সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কমান্ডারকে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন। গত সপ্তাহে একই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, তিনি প্রতিবাদকারীদের ওপর বিনা কারণে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছিলেন। ওই ঘটনার পর বিচারক ফেডারেল বাহিনীর ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, যাতে আগাম সতর্কতা ছাড়া কোনো ধরনের আগ্রাসী কৌশল ব্যবহারে নিষেধ করা হয়।
পরবর্তীতে, আদালত নির্দেশ দেয় যে, আইন প্রয়োগের সময় মাঠ পর্যায়ে থাকা এজেন্টদের অবশ্যই বডি ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে এবং তা চালু রাখতে হবে।
তবে কমান্ডার আদালতে উপস্থিত হওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তাদের অভিযান আইনসিদ্ধ এবং নীতিমালা অনুসারেই পরিচালিত হয়েছে। তাঁর মতে, “যখনই সহিংসতা বা দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেই হয়।”
ফেডারেল সংস্থার দাবি, এই অভিযানের সময় কিছু “বিক্ষোভকারী” কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে পাথর ও বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপ করেছিল, যার জবাবে তারা নিয়ন্ত্রিত টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। কমান্ডার নিজেও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন, যদিও তিনি গুরুতর আহত হননি।
অন্যদিকে, মামলার বাদীপক্ষ আদালতে অভিযোগ করেছে যে, সরকার “শান্তিপূর্ণ নাগরিকদের ওপর অযৌক্তিক সহিংসতা” চালিয়ে পরে সেটিকেই যুক্তিসঙ্গত দেখানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে, ফেডারেল বাহিনীর অভিযানের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, এমন পদক্ষেপ “অবাঞ্ছিত, অবৈধ এবং ভয়াবহ।”
বিচারক মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানি নেবেন, যেখানে অভিযানের বৈধতা ও ব্যবহৃত কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।



