যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে ক্রমবর্ধমান অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে শহরটিতে সংঘর্ষ, সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৩০০ সদস্যের একটি দল সেখানে দায়িত্ব পালন করবে। স্থানীয় সময় শনিবার এই অনুমোদন আসে। জানা যায়, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষের পরপরই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে থাকা কর্মকর্তারা জানান, বিক্ষোভকারীরা একটি গাড়ি দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ির ওপর হামলা চালায়, এবং ওই সময় অস্ত্রধারী এক নারী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তিনি নিজেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান।
এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় প্রশাসন জানিয়েছে, শহরটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বহুবার আক্রমণের মুখে পড়ছেন। ফলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে বলছেন, এটি অঙ্গরাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ এবং ফেডারেল কর্তৃত্বের অপব্যবহার। ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের গভর্নরসহ স্থানীয় নেতৃত্বের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার একটি অপ্রয়োজনীয় সংকট তৈরি করছে।
এর আগে একই ধরনের পরিস্থিতিতে ওরিগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ড শহরেও সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে আদালত সেটি স্থগিত করে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এ ধরনের পদক্ষেপ সংবিধানের মৌলিক নীতির পরিপন্থী এবং অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একজন মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, সাম্প্রতিক বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যানবাহন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল, ফলে নিরাপত্তাকর্মীরা গাড়ি থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন। বিক্ষোভে ব্যবহৃত গাড়ির চালকের হাতে অস্ত্র ছিল বলেও জানানো হয়।
তবে এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট নয় যে, ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা ইতোমধ্যে শিকাগোতে পৌঁছেছেন কিনা। কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কারণ, সাধারণত ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ক্ষমতা রাজ্যের গভর্নরের হাতে থাকে, কিন্তু এবার রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগটি শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাবও বহন করে। কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি বেশ বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। শিকাগোর পর এবার লস অ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ও মেমফিসেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শিকাগোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অপরাধের হার কিছুটা কমেছে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত দুই বছরে শহরটিতে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। তবে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরের তুলনায় শিকাগোর অপরাধের হার তুলনামূলক বেশি।
এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকার সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার মুখে চুপ করে বসে থাকতে চায় না। তাই সরকারি সম্পদ ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে মোতায়েনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
শহরটির প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে এখন মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। একপক্ষে স্থানীয় নেতৃত্ব যেখানে এই সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রবিরোধী বলছে, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন বলছে, এটি জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহীত একটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।