শার্লট শহরে ফেডারেল সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর শনিবার সকাল থেকেই উদ্বেগ এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তর জানায়, এই অভিযান মূলত জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতেই পরিচালিত হচ্ছে।
শহরজুড়ে এমন কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই স্থানীয় প্রশাসন বাসিন্দাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানায়। তারা স্পষ্ট করে জানায়, শহরের পুলিশ বিভাগ ফেডারেল অভিবাসন আটক কার্যক্রমে কোনোভাবেই অংশ নেয় না। শার্লট-মিকলেনবার্গ এলাকার নেতারা বলেন, হঠাৎ এমন ফেডারেল উপস্থিতি জনমনে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই স্থানীয় প্রশাসনের মূল লক্ষ্য।
সম্প্রতি শেরিফ কার্যালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, তিনি কয়েক দিন আগেই জানতে পেরেছেন যে সীমান্ত টহল সংস্থাগুলো শার্লটে অভিযান পরিচালনা করবে। স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তর এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন শার্লটস ওয়েব’। তাদের দাবি, উত্তর ক্যারোলিনায় অভিবাসন দপ্তরের প্রায় ১,৪০০টির মতো আটকাদেশ কার্যকর হয়নি, যার ফলে ওইসব ব্যক্তি রাস্তায় ফিরে এসেছেন, এবং এটি সুরক্ষাবান্ধব নীতি ব্যাহত করছে।
ফেডারেল দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, অবৈধ অবস্থানে থাকা বেশ কিছু ব্যক্তির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে বহু মানুষ ভুক্তভোগী হয়েছেন। তাই কেন্দ্রীয় প্রশাসনের ওপর দায়িত্ব পড়ে এসব ঝুঁকি মোকাবিলা করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
শনিবার সকাল থেকেই শহরের নানা এলাকায় অভিবাসন দপ্তর এবং সীমান্ত টহল কর্মকর্তাদের বাড়তি উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সাউথ বুলেভার্ড, আর্চডেল, অ্যারোউড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, রোজহেভেন এবং শ্যারন অ্যামিটির মতো এলাকায় কর্মকর্তারা তল্লাশি চালাতে দেখা যায়।
পূর্ব শার্লটের একটি লাতিন বেকারির মালিক, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই অভিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন, সকালে নিজের দোকানের বাইরে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি জানান, দিনের শুরুতেই ফেডারেল কর্মকর্তারা তার দোকানের সামনের পার্কিং লটে অভিযান চালায়, যখন তার কর্মীরা গ্রাহকদের জন্য খাবার প্রস্তুত করতে ব্যস্ত ছিলেন। তার ভাষায়, “আজ অনেক শিশু তাদের বাবা–মাকে হারিয়েছে।”
অভিযানকালে বেশ কয়েকটি স্থানে হাতকড়া পরিয়ে লোকজনকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। একটি শপিং সেন্টারে এক ব্যক্তিকে সীমান্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যেতে দেখা যায়, আরেক স্থানে কর্মকর্তারা একজনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আটক করছিলেন।
এছাড়া শহরের নর্থ ওয়েনডোভার রোডে একটি বড় হার্ডওয়্যার দোকানের পার্কিং লটেও কর্মকর্তাদের অবস্থান পাওয়া গেছে।
গত কয়েক মাসে অন্য কিছু বড় শহরেও এ ধরনের অভিযান চালানো হয়েছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ওয়ারেন্ট ছাড়াই আটক করা হওয়ায় তা নিয়ে আদালতের সমালোচনা এবং আইনি জটিলতা তৈরি হয়। কিছু শহরে প্রতিবাদ, উত্তেজনা এবং বলপ্রয়োগের বিষয়ও সামনে এসেছে।
মিকলেনবার্গ কাউন্টির কর্মকর্তারা শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, শার্লটে চলমান অভিযান শহরে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। দেশের অন্যান্য শহরে দেখা গেছে, অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষকে আটক করা হয়েছিল, যা জনমনে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
উক্ত বেকারিতে অভিবাসী অধিকার সংগঠনের কর্মীরা ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় ছোট কার্ড বিতরণ করছিলেন, যেখানে আইনগত অধিকার ও করণীয় উল্লেখ ছিল। বেকারির মালিক জানান, তিনি দীর্ঘদিনের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও নিজের পাসপোর্ট সঙ্গে রাখেন, কারণ তিনি আশঙ্কা করেন তার উচ্চারণ বা চেহারার কারণে তাকে ভুলভাবে আটকানো হতে পারে।
স্থানীয় এক কমিশনার ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, নির্বিচারে লোকজনকে গ্রেপ্তার করার প্রবণতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এতে প্রশাসনের মানবিক সীমা লঙ্ঘিত হয়।
দিনভর দোকানের ভেতরে–বাইরে দাঁড়িয়ে মালিক মাঝে মাঝে গ্রাহকদের আলিঙ্গন করছিলেন এবং বাইরে দাঁড়ানো গাড়িগুলোর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলেন। তার উদ্বেগ—বাচ্চারা যখন ফুটবল খেলে বাড়ি ফিরবে, তখন যেন বাবা-মায়ের উপস্থিতি হারিয়ে না যায়। তিনি বলেন, “আমার সন্তানরা যেন নিরাপদে আমাকে পায়, কিন্তু আজ অনেক শিশুই হয়তো তাদের বাবা-মাকে আর ঘরে ফিরে পাবে না।”



