শার্লটের বাসিন্দারা সপ্তাহান্তজুড়ে অস্বাভাবিক এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের ব্যাপক অভিযানে শহরজুড়ে ১৩০–এর বেশি মানুষের আটক হওয়ার পর স্থানীয় সমাজে ভয় ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাগুলো এমনভাবে ঘটেছে যে শহরের বহু পরিবার, ব্যবসায়ী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর শঙ্কায় পড়েছেন।
শহরে ছয় বছর ধরে বসবাসকারী কলম্বিয়ান বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিক জানান, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিজের পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁর উদ্বেগের জায়গা অভিবাসন তৎপরতার মাঝে তাঁর পরিবারও অযথা লক্ষ্যবস্তু হয়ে যেতে পারে।
সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে, “অপারেশন শার্লটস ওয়েব” নামের এই অভিযানে বড় সংখ্যায় মানুষকে আটক করা হয়েছে। অভিযানের শুরু থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এর প্রভাব এতটাই স্পষ্ট যে শহরের পরিচিত লাতিনো বেকারি সোমবার বন্ধ ছিল। একই দিন একটি শপিং সেন্টারের কয়েকটি ছোট ব্যবসাও হঠাৎ shutter নামিয়ে দেয়—কারণ সপ্তাহান্তে একটি গাড়ির জানালা ভেঙে এক মার্কিন নাগরিককে ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
ঘটনার শিকার ওই ব্যক্তি জানান, নাস্তা করতে বের হয়ে তিনি লক্ষ্য করেন কর্মকর্তারা একজনকে ধাওয়া করছেন। এরপর কয়েকটি গাড়ি তাঁর গাড়িকে ঘিরে ধরে, তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়, এবং শেষে একটি জানালা ভেঙে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেন। পরে কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তিনি নাকি অন্যদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করার চেষ্টা করছিলেন—যা তিনি অস্বীকার করেছেন।
সরকারি দপ্তরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, যারা আটক হয়েছেন তারা অভিবাসন আইন ভঙ্গ করেছেন। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করেন, কিছু আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগের অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। তবে স্থানীয় অভিবাসন–অধিকার সংগঠনগুলো এই বক্তব্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে এবং বলছে—অভিযানের মধ্যে এমন মানুষও আছেন, যারা কর্মস্থল, দোকানপাট বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আশপাশ থেকে আটক হয়েছেন, যাদের অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই।
এক অভিবাসন–সহায়তাকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, এটি কোনো জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া নয়, বরং শহরের রাস্তায় একধরনের আতঙ্ক ও বর্ণ–ভিত্তিক লক্ষ্যবস্তু বানানোর ঘটনা।
ঘটনার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে শিশুদের জন্য পরিচালিত শিক্ষাকেন্দ্রেও। কেন্দ্রটির সামনে বেশ কয়েকটি গাড়িতে করে অভিবাসন কর্মকর্তাদের দেখা যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি সেদিনের সব ক্লাস বাতিল করে দেয়। যদিও তখন কোনো শিশু উপস্থিত ছিল না।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভেতরেও আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়। রোববার একটি স্প্যানিশ ভাষার প্রার্থনায় আগের তুলনায় অর্ধেকেরও কম মানুষ অংশ নেন। পাদ্রী জানান, অনেকেই বাসা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
এদিকে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আটক হওয়া কিছু মানুষকে দূরবর্তী একটি অভিবাসন কেন্দ্রেও পাঠানো হয়েছে, যা থেকে আইনগত সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে কিছু মানুষকে আরও দূরবর্তী এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
শহরের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি নিজ দোকান বন্ধ রেখেছেন কারণ গ্রাহকদের নিরাপত্তা তাঁর কাছে সর্বাগ্রে। তাঁর ভাষায়, “টাকা আসবে–যাবে, কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
শার্লট শহরের বর্তমান পরিস্থিতি স্থানীয়দের মনে গভীর অস্থিরতা তৈরি করেছে। অভিযানের প্রভাব শুধু আটক হওয়া ব্যক্তিদের ওপরই নয়—বরং সমগ্র কমিউনিটির ওপর ব্যাপকভাবে পড়ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।



