Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকশান্তিচুক্তির পথে বাধা: পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা

শান্তিচুক্তির পথে বাধা: পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্ত করার ইসরায়েলি উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস কর্মকাণ্ড চলমান শান্তিচুক্তির প্রচেষ্টাকে গুরুতরভাবে বিপন্ন করছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার একটি বিল পাস করেছে। ২৫-২৪ ভোটে অনুমোদিত এই বিল অনুযায়ী, ইসরায়েল পশ্চিম তীরের ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি, ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ সম্পর্কিত আরেকটি প্রস্তাবও সংসদে গৃহীত হয়েছে।

এই ভোটের মাত্র এক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে একটি শান্তিচুক্তির ঘোষণা দেন। কিন্তু পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করার এই উদ্যোগে নতুন করে শান্তির পথে বাধা তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা।

রুবিও সাংবাদিকদের জানান, তাঁর অবস্থান স্পষ্ট—এ মুহূর্তে পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের মতো পদক্ষেপ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, প্রেসিডেন্টও বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন। এখনই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি আমাদের অর্জিত শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করবে।”

তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র; তাদের সংসদ ভোটে সিদ্ধান্ত নেয় এবং জনগণ নিজেদের মতামত প্রকাশ করে। তবে বর্তমানে পশ্চিম তীর সংযুক্তির উদ্যোগটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই আমরা মনে করি।”

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রুবিও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “যেকোনো সহিংসতা বা এমন কোনো পদক্ষেপ যা আমাদের অর্জনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, তা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।”

শান্তিচুক্তি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিনই শান্তির পথে নতুন হুমকি আসছে। কিন্তু আমরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্রুত এগোচ্ছি, এবং সপ্তাহান্তে যেসব অগ্রগতি হয়েছে, তা আশাব্যঞ্জক।”

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগী। তবে এবার পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইসরায়েলি সরকারের এই পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য “বিপৎসীমা” হিসেবে দেখছে।

বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে কয়েকটি আরব ও ইসলামি দেশকে সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। এমন সময় পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের পদক্ষেপ পুরো শান্তিপ্রক্রিয়াকে অচল করে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি সংসদে গৃহীত এই বিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বহু মানবাধিকার সংগঠন বলছে, এই সংযুক্তিকরণ কার্যত ফিলিস্তিনিদের অধিকার খর্ব করার সমান, যা দীর্ঘমেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্কবার্তা তাই শুধু একটি কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং শান্তিচুক্তির ভবিষ্যৎ রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। যদি ইসরায়েল এই সংযুক্তিকরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, তাহলে শান্তি আলোচনার পথ আরও কঠিন হয়ে উঠবে—এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments