সরকারি কার্যক্রম বন্ধের ঠিক একদিন আগে নীরবে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA)। সংস্থাটি অনুমোদন দিয়েছে মিফেপ্রিস্টোন নামের গর্ভপাতজনিত ওষুধের একটি নতুন জেনেরিক সংস্করণের, যা তৈরি করেছে ‘ইভিটা সলিউশনস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই ওষুধটি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত গর্ভপাতের দুইটি প্রধান ওষুধের একটি, এবং নতুন অনুমোদনের ফলে এটি হবে বাজারে দ্বিতীয় জেনেরিক সংস্করণ। প্রথম সংস্করণটি অনুমোদন পেয়েছিল ২০১৯ সালে।
মিফেপ্রিস্টোন সাধারণত মিসোপ্রোস্টল নামের আরেকটি ওষুধের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে মোট গর্ভপাতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই সম্পন্ন হয় এই দুটি ওষুধের মাধ্যমে। FDA-এর অনুমোদনপত্রে বলা হয়েছে, ইভিটা সলিউশনসের তৈরি ট্যাবলেটটি বাজারে বিদ্যমান ব্র্যান্ড সংস্করণ ‘মিফেপ্রেক্স’-এর সঙ্গে চিকিৎসাগতভাবে সম্পূর্ণ সমমানের। এই ওষুধটি যুক্তরাষ্ট্রে ২০০০ সাল থেকে অনুমোদিত।
প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য হলো গর্ভপাতজনিত চিকিৎসাকে স্বাভাবিক চিকিৎসার পরিসরে আনা এবং রোগীদের জন্য আরও সহজলভ্য ও নিরাপদ সমাধান তৈরি করা। তারা বলেছে, “আমাদের পণ্য বাজারে আসলে এটি রোগীদের জন্য সাশ্রয়ী বিকল্প তৈরি করবে। দীর্ঘদিনের নিরাপদ ব্যবহারের প্রমাণ থাকা এই ওষুধ ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে বাজারে পাওয়া যাবে।”
এই অনুমোদন আসে এমন এক সময়ে, যখন স্বাস্থ্য সচিবের দপ্তর জানিয়েছিল যে, মিফেপ্রিস্টোনের নিরাপত্তা পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। সেই ঘোষণার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই FDA অনুমোদন দেয় নতুন এই জেনেরিক সংস্করণে।
FDA কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, সংস্থার হাতে খুব সীমিত ক্ষমতা থাকে কোনো জেনেরিক ওষুধ অনুমোদনের ক্ষেত্রে। আইন অনুযায়ী, যদি আবেদনকারী প্রমাণ করতে পারে যে তাদের ওষুধটি আসল ওষুধের সমান উপাদান ও কার্যকারিতা রাখে, তাহলে অনুমোদন দিতে হয়। তিনি আরও জানান, “জেনেরিক ওষুধের জন্য আলাদা করে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার নতুন প্রমাণ জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।”
তবে, স্বাস্থ্য সচিবের দপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে মিফেপ্রিস্টোনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি বিশেষ গবেষণা চলছে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে FDA-এর ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নারীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে পারছে কি না।
সাধারণত FDA কোনো নতুন ওষুধ অনুমোদনের পর প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, কিন্তু এবার তারা তা করেনি। এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে গর্ভপাতবিরোধী সংগঠনগুলোর কাছ থেকে। এক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেছেন, “FDA ও স্বাস্থ্য দপ্তর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা এই ওষুধের ক্ষতিকর দিকগুলো বিস্তারিত পর্যালোচনা করবে, কিন্তু এর আগে হঠাৎ এই অনুমোদন আসা বাজারে সস্তা গর্ভপাত ওষুধ ছড়িয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত।”
একইভাবে, একজন সিনেটর সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, “প্রো-লাইফ নীতিকে সমর্থন করেও FDA যদি আরও একটি ‘গর্ভপাতের অস্ত্র’ অনুমোদন করে, তবে সেটা জনগণের প্রতি প্রতারণা।”
তবে, দীর্ঘদিনের গবেষণায় দেখা গেছে যে মিফেপ্রিস্টোন ও মিসোপ্রোস্টল একত্রে ব্যবহারে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা খুবই বিরল। সাধারণত গর্ভধারণের ৭০ দিন পর্যন্ত এই ওষুধ ব্যবহার করা যায়। মিফেপ্রিস্টোন শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোন বন্ধ করে গর্ভাবস্থা থামায়, আর মিসোপ্রোস্টল গর্ভাশয়ে সংকোচন সৃষ্টি করে গর্ভপাত ঘটায়।
প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বিতীয় জেনেরিক অনুমোদন প্রমাণ করে যে, ওষুধটি দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ, কার্যকর এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে, গর্ভপাতবিরোধী পক্ষ অনেক বছর ধরেই FDA-এর কাছে আবেদন করে আসছে প্রথম জেনেরিক ওষুধটির অনুমোদন বাতিল করতে। তাদের দাবি, কিছু নীতিগত পরিবর্তনের পর থেকে ওষুধটির ব্যবহার সীমা ৭ সপ্তাহ থেকে ১০ সপ্তাহে বাড়ানো হয়েছে, এবং এখন এটি টেলিহেলথের মাধ্যমে ডাকযোগেও পাওয়া যায়— যা তাদের মতে ঝুঁকিপূর্ণ।
সাম্প্রতিক এক গবেষণাপত্রে কিছু রক্ষণশীল গবেষক দাবি করেছিলেন যে মিফেপ্রিস্টোন ব্যবহারে গুরুতর জটিলতা আগের চেয়ে বেশি, তবে সেটি কোনো স্বীকৃত চিকিৎসা জার্নালে প্রকাশিত হয়নি এবং বিশেষজ্ঞরা একে অবৈজ্ঞানিক বলে অভিহিত করেছেন।
এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক এখনো চলমান। কেউ এটিকে নারীর স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন এটি সামাজিক ও নৈতিক ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—FDA-এর এই নীরব অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতসংক্রান্ত আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।



