Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশশরীয়তপুরকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবিতে পদ্মা সেতু টোল প্লাজায় আধাঘণ্টার অবরোধ

শরীয়তপুরকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবিতে পদ্মা সেতু টোল প্লাজায় আধাঘণ্টার অবরোধ

শরীয়তপুরকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত না করে ঢাকা বিভাগেই রাখার দাবিতে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে আধা ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ‘জাগো শরীয়তপুর’ নামে একটি সংগঠন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলা এই কর্মসূচির সময় পদ্মা সেতুতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল, ফলে সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।

অবরোধের কারণে নাওডোবা এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে কর্মসূচি শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা, যার মধ্যে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি সরকার দুটি নতুন বিভাগ গঠনের ঘোষণা দেয়—একটি ফরিদপুর, অন্যটি কুমিল্লা। ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবের পর থেকেই শরীয়তপুরে শুরু হয় প্রতিবাদ।

এর আগে ২০১৫ সালেও একই ধরনের প্রস্তাব এলে ‘জাগো শরীয়তপুর’ নামের সংগঠনটি ঢাকা বিভাগে থাকার দাবিতে আন্দোলন করেছিল। এবারও সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত এক মাস ধরে তারা সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ এবং মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবদের কাছেও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

গত ৫ অক্টোবর শরীয়তপুর শহরে সংগঠনটির উদ্যোগে এক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শরীয়তপুরকে ঢাকা বিভাগে রাখার জোর দাবি জানানো হয়। ওই সভায় জানানো হয়, দাবি না মানা হলে পদ্মা সেতু অবরোধ করা হবে। আজকের কর্মসূচি সেই ঘোষণারই বাস্তব রূপ।

সকাল ১০টার দিকে জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে সাধারণ মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। প্রথমে ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়, যেখানে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। পরে বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা টোল প্লাজার অদূরে সড়কে বসে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।

একজন জেলা পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা বলেন, “আমাদের ফরিদপুর বিভাগের গঠনে আপত্তি নেই, কিন্তু শরীয়তপুরের মানুষ ফরিদপুরের সঙ্গে যেতে চায় না। আমরা ঢাকার সঙ্গে ছিলাম, ঢাকাতেই থাকতে চাই। এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”

জাগো শরীয়তপুরের আহ্বায়ক জানান, “ভৌগোলিক অবস্থান এবং দূরত্বের বিবেচনায় শরীয়তপুর ঢাকার কাছাকাছি। প্রশাসনিক ও নাগরিক সেবার সুবিধা পেতে ঢাকায় থাকা আমাদের জন্য অধিক যুক্তিযুক্ত। তাই শরীয়তপুরকে কোনোভাবেই ঢাকার বাইরে নেওয়া যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “আজকের অবরোধ ছিল সতর্কবার্তা, দাবি না মানলে দীর্ঘমেয়াদী অবরোধের ডাক দেওয়া হবে।”

জাজিরা প্রান্তের পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার সামনে একটি সংগঠন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। প্রশাসনের অনুরোধে ও যাত্রীদের দুর্ভোগ বিবেচনা করে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অবরোধ শেষে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে তিনি জানান।

শরীয়তপুরবাসীর দাবি এখন একটাই—তাদের জেলা যেন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক কারণ বিবেচনায় ঢাকা বিভাগের অংশ হিসেবেই থেকে যায়। আন্দোলনকারীদের মতে, এ দাবির প্রতি সরকারের ইতিবাচক মনোযোগই পারে চলমান অসন্তোষের সমাধান আনতে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments