Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যল্যুভরে দিনের আলোয় সিনেমার মতো চুরি, চার মিনিটেই উধাও আট রত্নালংকার

ল্যুভরে দিনের আলোয় সিনেমার মতো চুরি, চার মিনিটেই উধাও আট রত্নালংকার

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘরে ঘটে গেছে এক অবিশ্বাস্য চুরির ঘটনা। ঘটনাটি এতটাই নিখুঁত ও দ্রুতগতির যে অনেকেই একে বাস্তবের চেয়ে সিনেমার দৃশ্য ভেবেছেন। রবিবার সকালে এই চুরির পরপরই ‘বিশেষ কারণে’ জাদুঘর বন্ধ ঘোষণা করা হয়, এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশজুড়ে শুরু হয় অভিযান।

রবিবার সকালে স্থানীয় সময় সাড়ে ৯টার দিকে দর্শনার্থীরা যখন জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরে দেখছিলেন, ঠিক তখনই শ্রমিকের বেশে আসা একদল চোর পরিকল্পিতভাবে প্রবেশ করে অ্যাপোলো গ্যালারিতে। এ জায়গাটিতেই সংরক্ষিত ছিল ফরাসি রাজপরিবারের মূল্যবান অলংকারসমূহ। একটি ভাঁজ করা মই ব্যবহার করে তারা জানালা ভেঙে ঢোকে এবং মাত্র চার মিনিটে আটটি অমূল্য রত্নালংকার নিয়ে মোটরবাইকে চড়ে পালিয়ে যায়।

চোরদের দক্ষতা এবং সময়নিয়ন্ত্রণে ফরাসি প্রশাসনও হতবাক। কর্মকর্তাদের ধারণা, চোরেরা অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, যেমন অ্যাঙ্গেল গ্রাইন্ডার ও ডিস্ক কাটার ব্যবহার করে দ্রুত জানালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুজন চোরকে তাঁরা দেখতে পান, যারা নির্মাণকাজের পোশাক পরে মই বেয়ে গ্যালারিতে ঢোকে। পুরো ঘটনাটি ঘটে ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময়ে।

চুরির পরপরই জাদুঘরের সব প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দর্শনার্থীদের সরিয়ে নেওয়া হয়। সিন নদীর পাশের রাস্তাগুলোও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তাকর্মীরা আশপাশের এলাকায় অভিযান চালায়, কিন্তু এখনো পর্যন্ত চোরদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, দলে চারজন সদস্য ছিল।

চুরি যাওয়া বস্তুগুলোর মধ্যে ছিল ফরাসি ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত আটটি রাজকীয় অলংকার— যার মধ্যে সম্রাজ্ঞী মেরি-লুইজ, উজিনি ও মেরি-অ্যামেলির ব্যবহৃত টিয়ারা, পান্না ও নীলমণি বসানো কণ্ঠহার এবং মূল্যবান ব্রোচ রয়েছে। তবে পালানোর সময় তারা একটি অলংকার— সম্রাজ্ঞী উজিনির মুকুট— ফেলে যায়। এতে ১,৩৫৪টি হীরা ও ৫৬টি পান্না বসানো ছিল, এবং পড়ে থাকায় সেটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফরাসি প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “চোরেরা পেশাদার, এবং এটি নিছক চুরি নয়—এটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর আঘাত।” ফ্রান্সের শীর্ষ নেতৃত্বও ঘটনাটির কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব এই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ফরেনসিক দল ইতোমধ্যে জাদুঘর ও আশপাশের সড়কে তদন্ত শুরু করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, যাতে চোরদের গতিপথ চিহ্নিত করা যায়। এছাড়া, ঘটনার সময় ডিউটিতে থাকা কর্মীদের কাছ থেকেও পৃথকভাবে জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে।

চুরি হওয়া অলংকারগুলো কেবল অর্থনৈতিক মূল্যের দিক থেকে নয়, বরং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও অমূল্য বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। শিল্পকর্ম চুরি বিশারদদের মতে, এসব অলংকার টুকরো টুকরো করে ভেঙে আলাদা রত্ন হিসেবে বিক্রি করা হতে পারে, যাতে সেগুলোর আসল পরিচয় ধরা না পড়ে।

ল্যুভর জাদুঘরের ইতিহাসে এই প্রথম নয়, এমন চুরির ঘটনা ঘটল। এক শতাব্দীরও বেশি আগে, ১৯১১ সালে এখান থেকেই বিখ্যাত ‘মোনালিসা’ চিত্রকর্মটি চুরি হয়েছিল। দুই বছর পর সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

তবে এবারকার ঘটনাটি শুধু ল্যুভরের নিরাপত্তা নয়, পুরো ফরাসি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দর্শনার্থীর চাপ এবং পর্যাপ্ত কর্মীসংখ্যার অভাব নিরাপত্তাকে দুর্বল করে তুলেছে। গত জুনেও কর্মীরা বাড়তি কর্মী নিয়োগের দাবিতে ধর্মঘট করেছিলেন।

দিনের আলোয় এমন নিখুঁত চুরি সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও কৌতূহল দুটোই সৃষ্টি করেছে। এক মার্কিন পর্যটক বলেন, “সবকিছু চোখের সামনে ঘটল, মনে হচ্ছিল কোনো হলিউড মুভির দৃশ্য।”

এখন চোরদের খোঁজে ফ্রান্সজুড়ে অভিযান চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত তাদের অবস্থান বা চুরি যাওয়া ঐতিহাসিক রত্নগুলোর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments