ব্যক্তিগত কিংবা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অনেকেই ল্যাপটপে সংরক্ষণ করেন নানান ধরনের তথ্য, ছবি ও ভিডিও। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোই এখন হ্যাকারদের মূল টার্গেট। তারা গোপনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে ল্যাপটপের ভেতর থেকে তথ্য চুরি করে নেয় এবং ব্যবহারকারীর কার্যকলাপের ওপর নজর রাখে। তাই সময় থাকতে সচেতন থাকা জরুরি। নিচে তুলে ধরা হলো ল্যাপটপে ম্যালওয়্যার সংক্রমণের কিছু স্পষ্ট লক্ষণ—
প্রথমেই লক্ষ করা উচিত ল্যাপটপের গতি। হঠাৎ যদি ল্যাপটপের পারফরম্যান্স কমে যায়, চালু হতে সময় নেয় বা কাজের গতি ধীর হয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে ভেতরে কিছু একটা সমস্যা আছে। ম্যালওয়্যার সাধারণত ল্যাপটপের প্রসেসিং ক্ষমতা ব্যবহার করে দূরবর্তী সার্ভারে তথ্য পাঠায়, যার ফলেই ল্যাপটপের গতি কমে যায়।
আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হলো ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় ঘন ঘন অচেনা ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন বা পপ-আপ দেখা। এটি ‘অ্যাডওয়্যার’ নামক ম্যালওয়্যারের কাজ, যা ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই বিজ্ঞাপন দেখায় এবং কখনো কখনো তথ্য চুরির পথ তৈরি করে।
এছাড়া, ব্রাউজারের হোমপেজ বা সার্চ ইঞ্জিন যদি নিজের অজান্তেই পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলেও সতর্ক হতে হবে। অনেক ম্যালওয়্যার গোপনে ব্রাউজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং ব্যবহারকারীর সার্চ হিস্টরি ট্র্যাক করে। একই সঙ্গে ব্যবহারকারীকে অন্য ওয়েবসাইটে রিডাইরেক্ট করে দেয়, যা হতে পারে ক্ষতিকর।
ম্যালওয়্যার আক্রান্ত ল্যাপটপে দেখা যায় অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার প্রবণতা। ল্যাপটপের ফ্যান ক্রমাগত চলতে থাকে বা অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। কারণ, এসব ক্ষতিকর সফটওয়্যার পেছনে থেকে কাজ করতে থাকে, যার ফলে প্রসেসরে বাড়তি চাপ পড়ে।
অপরিচিত সফটওয়্যার ইনস্টল থাকাও বিপদের ইঙ্গিত দেয়। অনেক সময় ব্যবহারকারীর অজান্তেই এসব সফটওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায়, যা আসলে ম্যালওয়্যারের অংশ। তাই নিয়মিত সফটওয়্যারের তালিকা যাচাই করা জরুরি।
ল্যাপটপে থাকা দরকারি ফাইল হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া বা ‘লক’ হয়ে যাওয়া র্যানসমওয়্যারের লক্ষণ। এটি এমন এক ধরনের ম্যালওয়্যার, যা ব্যবহারকারীর ফাইল এনক্রিপ্ট করে ফেলে এবং পরে মুক্তির জন্য অর্থ দাবি করে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে পেশাদার সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া উচিত।
শেষ লক্ষণটি অনেক সময় সবচেয়ে ভয়াবহ। তা হলো, অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা কাজ না করা। কিছু ম্যালওয়্যার এতটাই শক্তিশালী যে তারা অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারকেই নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। ফলে ব্যবহারকারী কোনো নিরাপত্তা সতর্কবার্তাই পান না।
সবশেষে বলা যায়, প্রযুক্তির এই যুগে ল্যাপটপে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ এক বড় ঝুঁকি। তাই নিয়মিত অ্যান্টিভাইরাস আপডেট রাখা, সন্দেহজনক ওয়েবসাইট বা ইমেইল এড়িয়ে চলা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ক্লাউডে ব্যাকআপ রাখা এখন সময়ের দাবি। সচেতনতাই পারে ম্যালওয়্যার থেকে আপনার তথ্য ও ল্যাপটপকে নিরাপদ রাখতে।



