লেবার পার্টির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পর, নতুন ডেপুটি লিডার হিসেবে লুসি পাওয়েলের প্রত্যাবর্তন দলটির জন্য নতুন করে পথচলার সুযোগ তৈরি করেছে। সম্প্রতি পুনর্গঠিত ক্যাবিনেটে তিনি একমাত্র মন্ত্রী যিনি আগেই পদচ্যুত হয়েছিলেন। এবার তার ফেরা অনেকের কাছেই লেবারের জন্য পুনর্মূল্যায়নের সময় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে কেয়ারফিলিতে লেবার পার্টির পরাজয় নিয়ে দলের মধ্যে নতুন করে আত্মসমালোচনার ধারা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী সেই পরাজয়কে ২০২১ সালের হার্টলপুল উপনির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা একসময় লেবারের জন্য চরম লজ্জার ছিল এবং সে সময়কার নেতা প্রায় পদত্যাগের চিন্তা করেছিলেন। তার মতে, এই পরাজয় লেবারকে নতুনভাবে “গতি ও পরিসর” নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই ঘটনার তুলনা পুরোপুরি সঠিক নয়। হার্টলপুলের পর লেবারের নেতৃত্বে যারা ছিলেন, তারা মনে করেছিলেন, দলকে সফল করতে হলে অভ্যন্তরীণ বামঘেঁষা প্রভাব সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় ও নিয়ন্ত্রিত নীতি গ্রহণ করতে হবে। সেই ধারণা থেকেই পরবর্তীতে লেবার হয়ে ওঠে এক প্রকারের টেকনোক্র্যাটিক দল, যা সতর্ক, ঝুঁকিবিহীন এবং ভাবাদর্শিক দিক থেকে দূরে সরে যায়।
এখন লেবারের প্রয়োজন তার একেবারে বিপরীত পথে হাঁটা। লুসি পাওয়েলের ডেপুটি লিডার হিসেবে নির্বাচিত হওয়া যেন সেই বার্তাই দেয়। তুলনামূলক কম ভোটে জয়ী হলেও এটি দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের প্রতিফলন। তিনি সম্প্রতি একমাত্র মন্ত্রী হিসেবে যিনি দলীয় পুনর্গঠনের সময় পদ হারিয়েছিলেন, এবার আবারও ক্যাবিনেট আলোচনায় ফিরেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এখন প্রয়োজন “পথ সংশোধন” — যেখানে শীর্ষ পর্যায়ের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে ঐতিহ্যবাহী লেবার মূল্যবোধ যেমন সমতা ও দারিদ্র্য বিমোচনের মতো বিষয়গুলোকে শক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।
যদিও পাওয়েল কোনো সরাসরি নীতিগত দায়িত্বে থাকছেন না, তবে তিনি ক্যাবিনেট বৈঠকে নিয়মিত অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। দলের প্রধান যদি সুবিবেচক হন, তবে এই প্রত্যাবর্তনকে হুমকি হিসেবে না দেখে বরং বৃহত্তর দলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ হিসেবে দেখবেন।
লেবারের এক প্রাক্তন উপ-প্রধানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা পাওয়েল মূলত ‘সফট লেফট’ ধারার অনুসারী। তিনি বিদ্রোহী নন, বরং বাস্তববাদী। পূর্বে প্রতিবন্ধী সুবিধা কাটছাঁটের প্রস্তাব নিয়ে তার সতর্কবার্তা শোনা হলে, বর্তমান সরকার হয়তো কিছু বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতো না।
তবে আগের ডেপুটি লিডারের মতো তিনি ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারের মর্যাদা পাচ্ছেন না। আগামী মে মাসে স্থানীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে অত্যন্ত সতর্কভাবে এগোতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত সমালোচনামূলক অবস্থান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবুও তার উদ্যোগ — বিশেষ করে অভিবাসন বা রিফর্ম ইউকের মতো বিতর্কিত ইস্যুতে দলের অবস্থান স্পষ্ট করা — লেবারের জন্য প্রাসঙ্গিক ও জরুরি হয়ে উঠেছে।
গত বছরের নির্বাচনের পর থেকেই লেবারের জনসমর্থনে পতন দেখা গেছে। প্রায় ১ কোটি পেনশনভোগীর জন্য শীতকালীন জ্বালানি ভাতা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সেই পতনের সূচনা বলে মনে করা হয়। জনগণের প্রত্যাশা ও সরকারের সিদ্ধান্তের এই ফারাকই দলটির প্রতি হতাশা বাড়িয়েছে।
ক্যারফিলিতে প্লেড কামরির জয়ে প্রমাণিত হয়েছে, জনগণের কল্যাণে উদার রাজনীতি এখনও প্রভাবশালী হতে পারে, যদি তা দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাস্তবায়ন করা যায়। তাই লেবারের পুনরুদ্ধারের পথ এখন তার পুরনো সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরাবিষ্কারে। লুসি পাওয়েল সেই মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করছেন— এবং তার ক্যাবিনেটে ফিরে আসা সেই আদর্শ পুনর্জাগরণের একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।



