লাদাখে চলমান আন্দোলন নতুন মোড় নিয়েছে। স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না। তাঁদের দাবি, ২৪ সেপ্টেম্বরের সহিংস ঘটনায় কারা দায়ী, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে। আন্দোলনকারীরা চাইছেন, এই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হোক সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতিকে।
শুধু তাই নয়, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য পরিচিত খ্যাতনামা পরিবেশকর্মী ও শিক্ষাবিদসহ যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদেরও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি তুলেছেন লাদাখি নেতারা। এই গ্রেপ্তারগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত এক শিক্ষাবিদকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার অভিযোগ তুলেছে, তাঁর উসকানিতেই জনতা সহিংস হয়ে উঠেছিল। তবে আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, এত দিন ধরে তাঁদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ আর অনশন নির্ভর ছিল, তাই সহিংসতার দায় তাঁদের নয়।
লেহ অঞ্চলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি না হলে তাঁরা কোনো আলোচনায় বসবেন না। এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে মুসলিমপ্রধান কারগিলের নেতারাও। দুই জেলার মানুষের এই ঐক্য আন্দোলনকে আরও শক্ত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।
কারগিলের পক্ষ থেকেও জোরালোভাবে বলা হয়েছে, পৃথক রাজ্যের মর্যাদা এবং লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে কোনো আপস হবে না। একই সঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, স্থানীয়দের জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন এবং লোকসভায় আরও একটি আসন বৃদ্ধি ছাড়া এই আন্দোলনের ইতি ঘটবে না। বর্তমানে বিশাল লাদাখ অঞ্চলের জন্য লোকসভায় একটি মাত্র আসন রয়েছে।
পরিস্থিতির জটিলতা বেড়েছে ২৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর। ওই দিনের সহিংসতায় কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে, অনেকে আহত হন। এরপর থেকে লেহ শহরে কারফিউ জারি আছে, যদিও তা কিছু সময়ের জন্য শিথিল করা হচ্ছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলেছে, আলোচনার দরজা খোলা আছে এবং ইতোমধ্যেই অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামী ৬ অক্টোবরের বৈঠক নির্ধারিত থাকলেও বর্তমান উত্তেজনা সেটিকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
লাদাখের দুই জেলা—লেহ ও কারগিল—প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এখানে বৌদ্ধ ও মুসলিম জনগোষ্ঠী পাশাপাশি বসবাস করে, মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। যদিও তাঁদের ধর্ম আলাদা, পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হওয়ার দাবিতে দুই সম্প্রদায়ই একমত। আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পর তাঁদের বিশেষ স্বাতন্ত্র্য ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বাইরের লোকজন এসে জমি কিনছে, স্থানীয় জনবিন্যাস পাল্টে যাচ্ছে। তাই সাংবিধানিক সুরক্ষা ছাড়া তাঁদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।
নেতারা আরও বলছেন, ভোটের আগে ক্ষমতাসীন দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে লাদাখের মানুষের দাবি পূরণ করা হবে। কিন্তু এখন সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসছে সরকার। তাঁদের মতে, এই অবস্থান জনগণের সঙ্গে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা।
লাদাখের নেতারা একসঙ্গে জানাচ্ছেন, এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চলেছে এবং চলবেও। সহিংসতার দায় তাঁদের নয়। প্রকৃত সত্য উদঘাটন ছাড়া আলোচনায় বসা সম্ভব নয়। তাঁদের দাবি পূরণ না হলে এই আন্দোলন আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা।