Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যলাদাখে অশান্তির আগুন: কেন্দ্রের সঙ্গে জনগণের টানাপোড়েন

লাদাখে অশান্তির আগুন: কেন্দ্রের সঙ্গে জনগণের টানাপোড়েন

লাদাখ, দীর্ঘদিনের শান্ত অঞ্চল, হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নিয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় লেহ শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটেছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। লাদাখের বিশেষ দাবিদাওয়া ঘিরে এই অস্থিরতা এবার নতুন মাত্রা পেয়েছে।

লাদাখের মানুষের দাবি মূলত স্বশাসন ও সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্তি। তাদের মতে, এটি হলে অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে। একইসঙ্গে আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, লেহ ও কারগিলের জন্য পৃথক লোকসভা আসনও তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান এই দাবিগুলোর বিষয়ে স্পষ্ট নয়। যদিও আলোচনার জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠিত হয়েছে, তবুও মূল দাবির বিষয়ে আশ্বাস মেলেনি। এ কারণে ক্ষোভ জমতে জমতে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

লাদাখের অশান্তির কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এক শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী। তাঁর প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বিদেশি অনুদান আইন ভঙ্গের অভিযোগে। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তও শুরু হয়েছে। সরকারের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সহিংসতায় তাঁর ভূমিকা রয়েছে। এমনকি তাঁকে গ্রেপ্তারের কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসা এই ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযুক্ত করা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

লাদাখের জনগণ মনে করেন, সরকারের অবহেলা ও দীর্ঘদিনের দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়াই অশান্তির মূল কারণ। অন্যদিকে আন্দোলনরত দু’জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় ক্ষোভ বাড়ে এবং সেটিই সহিংসতায় রূপ নেয়।

বৌদ্ধপ্রধান লেহ ও মুসলিমপ্রধান কারগিল—দুই অঞ্চলের মানুষ এবার একই দাবিতে একজোট হয়েছেন। বৃহস্পতিবার কারগিলে সর্বাত্মক বন্ধ পালিত হয়। বিশেষ মর্যাদা, স্বশাসন ও সাংবিধানিক সুরক্ষা আদায়ের লড়াইয়ে ধর্মীয় বিভাজন এখানে বিলীন হয়ে গেছে।

লাদাখে এর আগে বড় ধরনের অশান্তি দেখা যায়নি। ১৯৮৯ সালে সীমিত আকারে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেও দীর্ঘ তিন দশক ধরে এ অঞ্চল ছিল শান্ত। এমনকি কাশ্মীর উপত্যকা উত্তাল হলেও লাদাখ অশান্ত হয়নি। এবার কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন।

২০১৯ সালে জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে লাদাখকে ঘোষণা করা হয়। প্রথমে এই সিদ্ধান্তে খুশি হলেও পরবর্তীতে মানুষ বুঝতে পারে, পূর্ণ স্বশাসনের সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্রমে হতাশা বাড়তে থাকে।

সাম্প্রতিক সহিংসতায় বিক্ষোভকারীরা শাসক দলের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এটি স্পষ্ট করছে, লাদাখি জনগণের আস্থা ক্রমেই সরকারের হাতছাড়া হচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক নির্বাচনে স্বাধীন প্রার্থীর জয়ও তারই প্রমাণ।

শিক্ষা, পরিবেশ ও সমাজের স্বার্থে কাজ করা আন্দোলনকারীর প্রতি মানুষের আস্থা এখনো প্রবল। তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালালেও তাঁর জনপ্রিয়তা সরকারের চোখে সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর অনশন ও আন্দোলনই জনমনে নতুন চেতনা সৃষ্টি করেছে।

সরকারের আশঙ্কা, কাশ্মীর এখনো স্বাভাবিক না হওয়ায় লাদাখও অশান্ত হয়ে উঠলে দেশের অখণ্ডতা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই আন্দোলনের নেতাকে কোণঠাসা করার কৌশলই বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে লাদাখি মানুষের মন জয় করা সম্ভব হবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments