একজন মার্কিন নাগরিক যিনি রেকর্ড ২৭১ দিন ধরে জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত শূকরের কিডনি নিয়ে বেঁচে ছিলেন, অবশেষে তার শরীর থেকে সেই অঙ্গটি অপসারণ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তার কিডনি কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় তিনি এখন আবার ডায়ালাইসিসে ফিরবেন।
৬৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করেছিলেন। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থবারের মতো কোনো জীবিত মানুষের শরীরে জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত শূকরের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা। চিকিৎসকরা বলেন, এই কিডনিটি এমনভাবে পরিবর্তিত করা হয়েছিল যাতে মানব শরীর তা প্রত্যাখ্যান না করে এবং সংক্রমণসহ জটিলতা কমে আসে।
১৯৯০-এর দশক থেকেই তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তিন বছর আগে জানা যায়, তার কিডনি সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে গেছে। এরপর থেকে নিয়মিত ডায়ালাইসিসই তার বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় ছিল। সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা করে তাকে ডায়ালাইসিস মেশিনে যুক্ত থাকতে হতো। সেই সময়গুলো ছিল শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত ক্লান্তিকর।
এই অবস্থায় তিনি সাহস করে অংশ নেন এক পরীক্ষামূলক চিকিৎসা প্রক্রিয়ায়—যাকে বলা হয় জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন। অর্থাৎ, প্রাণীর অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপন। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তিনি জানতেন, যদি এটি সফল হয়, তবে শুধু তিনিই নয়—ভবিষ্যতে হাজারো কিডনি রোগী এর সুফল পেতে পারে।
প্রতিস্থাপনের পর কয়েক মাস ধরে তার শারীরিক অবস্থা আশাব্যঞ্জক ছিল। তিনি জানান, আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তি ও উদ্যম ফিরে পেয়েছিলেন। নিজের ভাষায়, “আমি আবার বেঁচে উঠেছিলাম, অনেকদিন পর যেন জীবন ফিরে পেয়েছি।” তিনি এই অভিজ্ঞতাকে এক “অলৌকিক ঘটনা” বলে বর্ণনা করেন।
শূকরের কিডনি নেওয়ার পর তিনি নিজের দৈনন্দিন জীবনেও পরিবর্তন আনতে শুরু করেন। রান্না করা, বাড়ির কাজ করা, এমনকি তার প্রিয় কুকুরের সঙ্গে দীর্ঘ হাঁটাও শুরু করেন। জুন মাসে তিনি বোস্টনের বিখ্যাত বেসবল মাঠে গিয়ে প্রথম বল ছুড়ে দেন—যা ছিল তার জীবনের একটি বড় অর্জন।
চিকিৎসা দল তাকে “একজন সাহসী চিকিৎসা-অগ্রদূত” হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলেছেন, “তিনি শুধু নিজের জীবন রক্ষার জন্যই নয়, ভবিষ্যতের অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।”
ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “এটি ছিল এক কঠিন যাত্রা—অজানা ও বিস্ময়ে ভরা। পরীক্ষামূলক ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল, তবে এই নয় মাসে আমরা অনেক কিছু শিখেছি ও আবিষ্কার করেছি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সেই শূকরের প্রতি কৃতজ্ঞতা যেটির অঙ্গ তাকে নতুন জীবন দিয়েছিল। “সে আমার নায়িকা,” লিখেছেন তিনি। “এই অঙ্গটি আমাকে ডায়ালাইসিস থেকে বিরতি দিয়েছে, আর আমি গর্বিত যে তার মাধ্যমে আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন অধ্যায় খুলতে পেরেছি।”
বর্তমানে তিনি আবার ডায়ালাইসিসে ফিরছেন এবং মানব কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯০,০০০ মানুষ এখন কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষায় আছেন, যদিও দেশটিতে ১৭ কোটি মানুষ ইতোমধ্যে অঙ্গদাতা হিসেবে নিবন্ধিত।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আরও কয়েকজন রোগীর ওপর অনুরূপ পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। প্রথম রোগী দুই মাস পর মারা যান, তবে মৃত্যুর কারণ প্রতিস্থাপন সংশ্লিষ্ট ছিল না। আরেকজন রোগীর ক্ষেত্রে অঙ্গের রক্তপ্রবাহ সীমিত হওয়ায় সেটি সরিয়ে ফেলতে হয়। আরেকজন রোগীর শরীরে শূকরের কিডনি টানা চার মাস কার্যকর ছিল, পরে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চলতি বছরেই আরও একটি শূকরের কিডনি মানবদেহে প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরীক্ষাগুলো ভবিষ্যতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘাটতি দূর করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী।



