২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রাইজমানির ঘোষণা দিয়েছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য এই আসরে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য পুরস্কারের অঙ্ক আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। ফিফার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের বিশ্বকাপে মোট প্রাইজমানি আগের আসরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিশ্ব ফুটবলের অর্থনৈতিক পরিসরে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
এই ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাপ্ত অর্থ। বিশ্বকাপ জয়ী দল পাবে রেকর্ড ৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সমান। এটি বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ একক পুরস্কার। শুধু তাই নয়, ৪৮টি অংশগ্রহণকারী দেশের মধ্যে মোট ৭২ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বণ্টন করা হবে, যার বাংলাদেশি মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা।
ফিফার হিসাব অনুযায়ী, এই বিপুল অর্থের বড় একটি অংশ পারফরম্যান্সভিত্তিক পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে। টুর্নামেন্টে দলের সাফল্য ও অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে মোট ৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার বণ্টন করা হবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। বাকি অর্থের একটি অংশ নির্ধারিত থাকবে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলের প্রস্তুতির জন্য। প্রতিটি দল পাবে ১৫ লাখ ডলার করে, যা ভ্রমণ, ট্রেনিং ক্যাম্প, আবাসন এবং অন্যান্য লজিস্টিক ব্যয় মেটাতে সহায়ক হবে। এই খাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।
এদিকে ২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজন ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে টিকিটের উচ্চমূল্য নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ফিফা। দর্শক ও সমর্থকদের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে কিছু ম্যাচের টিকিটের দাম কমিয়ে ৬০ ডলারে নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যেই ফিফা কাউন্সিল থেকে রেকর্ড পুরস্কার তহবিলের ঘোষণা আসে, যা আয়োজকদের আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।
প্রাইজমানির বণ্টন কাঠামো অনুযায়ী, গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়া দলগুলো পাবে ৯০ লাখ ডলার করে। ফাইনালে পরাজিত রানার্সআপ দল পাবে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দল পাবে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং চতুর্থ স্থানে থাকা দল পাবে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। প্রতিটি ধাপে অর্থনৈতিক প্রণোদনা বাড়ানোয় দলগুলোর প্রতিযোগিতামূলক মান আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগের বিশ্বকাপগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এবারের পুরস্কার তহবিলের ব্যাপকতা আরও স্পষ্ট হয়। ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছিল ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। তার আগের ২০১৮ বিশ্বকাপে বিজয়ী দল পেয়েছিল ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আরও পেছনে গেলে দেখা যায়, ১৯৮২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছিল মাত্র ২২ লাখ ডলার। ফিফা ১৯৮২ সাল থেকেই নিয়মিতভাবে বিশ্বকাপের প্রাইজমানির তথ্য প্রকাশ করে আসছে, আর প্রতিটি আসরেই এই অঙ্ক ধীরে ধীরে বেড়েছে।
ফিফার শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, এবারের রেকর্ড প্রাইজমানি বিশ্বকাপকে শুধু একটি ক্রীড়া আয়োজন হিসেবে নয়, বরং বৈশ্বিক ফুটবল সম্প্রদায়ের জন্য একটি নতুন আর্থিক দিগন্ত হিসেবে তুলে ধরবে। এই অর্থ বিভিন্ন দেশের ফুটবল কাঠামো উন্নয়ন, খেলোয়াড় তৈরি এবং অবকাঠামো শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এই ঘোষণার পর ফুটবল সমর্থকদের বিভিন্ন সংগঠনও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের মতে, রেকর্ডভাঙা পুরস্কার তহবিল প্রমাণ করে যে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য অর্থের ঘাটতি নেই। একই সঙ্গে তারা বিশ্বকাপের ঐতিহ্য ও বিশেষত্ব রক্ষায় সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
৪৮টি দল নিয়ে আয়োজিত হতে যাওয়া ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ শুরু হবে আগামী ১১ জুন। উদ্বোধনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে মেক্সিকো সিটিতে, যেখানে সহ আয়োজক দেশ মেক্সিকো মুখোমুখি হবে দক্ষিণ কোরিয়ার। বাড়তি দল, বাড়তি ম্যাচ এবং রেকর্ড প্রাইজমানি নিয়ে এই বিশ্বকাপ যে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে, তা বলাই যায়।



