Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিজনেসরুশ তেল আমদানিতে ভারতের ওপর ট্রাম্পের সতর্কবার্তা: ‘বন্ধ না করলে দিতে হবে...

রুশ তেল আমদানিতে ভারতের ওপর ট্রাম্পের সতর্কবার্তা: ‘বন্ধ না করলে দিতে হবে ভারী শুল্ক’

রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে আবারও কড়া অবস্থান নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর দাবি, ভারত যদি রুশ তেল আমদানি বন্ধ না করে, তবে দেশটিকে ‘বিপুল পরিমাণ শুল্ক’ গুনতে হবে। এই ইস্যু নতুন করে মার্কিন–ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনকে সামনে নিয়ে এসেছে।

এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, “আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে রুশ তেল কেনা আর চলবে না।”

তবে ভারতের পক্ষ থেকে ভিন্ন অবস্থান এসেছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমন কোনো আলোচনার বিষয়ে তারা অবগত নয়। ভারতীয় দিকের এই বক্তব্যের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “তারা যদি এমন অবস্থান নেয়, তবে তাদের বিপুল শুল্ক দিতে হবে—যা তারা নিশ্চয়ই দিতে চাইবে না।”

মার্কিন প্রশাসনের মতে, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার মাধ্যমে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধে পরোক্ষভাবে অর্থায়ন করছে। এই কারণেই ভারতের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে বলে জানানো হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এর অর্ধেকই রুশ তেল কেনার শাস্তি হিসেবে আরোপিত হয়েছে।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে পশ্চিমা দেশগুলো রুশ তেল আমদানি বন্ধ করে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই সুযোগে রাশিয়া কম দামে তেল বিক্রি শুরু করে এবং ভারত হয়ে ওঠে রাশিয়ার অন্যতম বড় ক্রেতা। সমুদ্রপথে ভারতই রুশ তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ হিসেবে উঠে আসে।

সম্প্রতি ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, ভারত রুশ তেল আমদানি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানায়, ওই দিন দুই দেশের নেতাদের মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি। মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, ভারতের মূল লক্ষ্য দেশের ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা।

অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাশিয়ার তেল কেনা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে ভারত। তবে ভারতীয় সূত্রের দাবি, এমন কোনো তাৎক্ষণিক পরিবর্তন দেখা যায়নি। তাদের মতে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কার্যাদেশ ইতিমধ্যেই নভেম্বর পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে, যার কিছু তেল ডিসেম্বর মাসেও পৌঁছাবে। ফলে প্রকৃত কমতি ডিসেম্বর বা জানুয়ারির পরিসংখ্যানে দেখা যেতে পারে।

তথ্য বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান কেপলারের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি বরং ২০ শতাংশ বাড়তে পারে। ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রুশ তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর রাশিয়া রপ্তানি বাড়িয়েছে, যার ফলে ভারতীয় আমদানিও বেড়েছে। কেপলারের হিসাবে, এ মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের দৈনিক তেল আমদানি প্রায় ১৯ লাখ ব্যারেলে পৌঁছাতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই হুঁশিয়ারি কেবল রাজনৈতিক চাপই নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি নীতির ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা যেমন অগ্রাধিকার, তেমনি বৈশ্বিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করাও এক বড় চ্যালেঞ্জ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments