বিশ্বজুড়ে রেলভ্রমণকে আরামদায়ক ও নিরাপদ করতে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রবণতা বাড়ছে। আধুনিক সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন নকশার রেলস্টেশন। প্রতিবছর স্থাপত্যবিষয়ক ওয়েবসাইট প্রিক্স ভেরাসেইলিস বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রেলস্টেশনের তালিকা প্রকাশ করে। এ বছরের তালিকায় স্থান পাওয়া দশটি রেলস্টেশনের বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো।
প্রথম স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির গ্যাডিগেল স্টেশন। শহরের কেন্দ্রে নির্মিত এই স্টেশনটির পুরো অন্দরসজ্জায় প্রকাশ পেয়েছে স্থাপত্যিক নান্দনিকতা। স্টেশনের প্রবেশমুখে রয়েছে বিশাল শিল্পকর্ম, যা প্রাচীন রেলওয়ে টানেল থেকে অনুপ্রাণিত। মোজাইক টাইলসের সমন্বয়ে তৈরি এই ব্যতিক্রমী নকশা গ্যাডিগেল জনগোষ্ঠীর ইতিহাসকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। স্থানীয় ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানাতে স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে তাদের নাম অনুসারে। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত যুক্তরাজ্যের একটি স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান স্টেশনের মূল নকশা প্রস্তুত করে এবং এতে সহযোগিতা করে আরেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীনের গুয়াংজুর বাইয়ুন স্টেশন। বিশাল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত এই স্টেশনটির নকশা করেছে জাপানের খ্যাতনামা একটি স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান। বহু তলাবিশিষ্ট রেলস্টেশনটির উপরের ছাদে ব্যবহৃত স্বচ্ছ কাচ দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে। প্রতিটি তলায় রয়েছে হাঁটার পথ এবং এক পাশে সবুজ গাছপালা। যা স্টেশনটিকে ত্রিমাত্রিক পার্কের মতো অনুভূতি দেয়।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রিয়াদের কেএএফডি রেলস্টেশন। সৌদি আরবের রাজধানীর বাদশাহ আবদুল্লাহ ফিন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্টে স্থাপিত এই স্টেশনের নকশায় আধুনিকতার সঙ্গে প্রকৃতির ছোঁয়া রাখা হয়েছে। ঢেউয়ের মতো ছাদ মরুভূমির বালিয়াড়িকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি বিশ্বের অন্যতম বড় স্বয়ংক্রিয় পরিবহনব্যবস্থার কেন্দ্রও।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে রিয়াদেরই আরেক স্টেশন কসর আল হুকমা। বহুজাতিক একটি স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান তৈরির দায়িত্ব নেয়। দূর থেকে দেখলে এটি একটি বিশাল আইসক্রিমের মতো মনে হয়, যা পেরিস্কোপ হিসেবে পরিবেশের আলোকে ভেতরে প্রতিফলিত করে। স্থানীয় নাজদি স্থাপত্যের ঐতিহ্য এতে সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। ভেতরে রয়েছে সবুজে ভরা ভূগর্ভস্থ বাগান।
ফ্রান্সের সাঁ দেনি প্লেয়েল স্টেশন তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এটি প্যারিসে অবস্থিত। স্থাপনাটির বিশাল ৩৫ মিটার উচ্চতার কেন্দ্রস্থলে চারদিক থেকে প্রবেশ করা সূর্যের আলো এক অনন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে। কাঠের মেঝে ইস্পাত ও কংক্রিটের গঠনশৈলীর সঙ্গে বৈপরীত্য তৈরি করে স্টেশনের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ফ্রান্সের আরেক স্টেশন ভিল্যজুইফ গুস্তাভ রুসি। আলো এবং প্রতিবিম্বের অভিনব সংমিশ্রণে তৈরি এই স্থাপনাটিতে রয়েছে ৭০ মিটার প্রশস্ত কাচের ছাদ। যার মাধ্যমে প্রাকৃতিক আলো ভূগর্ভস্থ প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
সপ্তম স্থানে জায়গা পেয়েছে বেলজিয়ামের মস স্টেশন। এর নকশা করেছেন বিখ্যাত এক স্থপতি, যিনি তাঁর স্বতন্ত্র শৈলী মেনে স্টেশনটিকে সাদা স্টিলের বিশাল গ্যালারি রূপে গড়ে তুলেছেন। এটি দেখতে যেন আধুনিক কোনো ক্যাথেড্রাল।
অষ্টম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল। মার্কিন স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ নকশায় নির্মিত এই বিশাল স্টেশনটিতে রয়েছে ৪৪টি প্ল্যাটফর্ম। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও এটি বিশ্বের দীর্ঘ রেলস্টেশনগুলোর একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।
নবম স্থানে রয়েছে জাপানের ঐতিহ্যবাহী টোকিও স্টেশন। চিয়োদার মারুনৌচি এলাকায় অবস্থিত এই ব্যস্ত স্টেশনটি আধুনিকতা এবং পুরোনো স্থাপত্যশৈলীর মেলবন্ধন। পশ্চিম পাশে অবস্থিত ইটের তৈরি প্রবেশদ্বার ১৯১৪ সাল থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে।
দশম স্থানে রয়েছে পর্তুগালের সাও বেনতো স্টেশন, যা পোর্তো শহরে অবস্থিত। ইউনেসকো ঘোষিত এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন হিসেবে পরিচিত।



