রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত এক ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আহত হয়েছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এক শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের পাশে ঘটে এ ঘটনা, যা মুহূর্তেই শিক্ষাঙ্গনে চাঞ্চল্য তৈরি করে।
আহত শিক্ষার্থীর নাম স্বাধীন আহমেদ, যিনি রুয়েটের সিরামিক অ্যান্ড মেটালার্জিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বাধীন আহমেদ কাজলা গেট এলাকা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছিলেন। জুবেরী ভবনের আগে শেখ রাসেল মডেল স্কুলের পাশের মাঠে পৌঁছালে হঠাৎ দুই থেকে তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাঁর পথরোধ করে। কথাবার্তার আগেই দুর্বৃত্তরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। এতে তাঁর থুতনিতে এবং বাঁ হাতে গুরুতর আঘাত লাগে। স্থানীয়রা তাঁর চিৎকার শুনে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে সহপাঠীরা আহত স্বাধীনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। রাতেই রুয়েটের একাধিক শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তা হাসপাতালে উপস্থিত হন। তাঁরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর স্বাধীনকে সাময়িকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক সরকার বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা হাসপাতালে যান এবং আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সার্বিক খোঁজ নেন। যেহেতু ঘটনাটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘটেছে, তাই বিষয়টি দ্রুত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়। রুয়েট প্রশাসন অপরাধীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতা চেয়েছে।
তিনি আরও জানান, আহত শিক্ষার্থীর থুতনি ও হাতে সেলাই পড়েছে। শনিবার রুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রহমান বলেন, রুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। রুয়েট প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, যাতে দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এদিকে, নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ বা মামলা হয়নি। তবে অভিযোগ পেলে পুলিশ তদন্ত শুরু করবে এবং যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা এখন সময়ের দাবি। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অতিরিক্ত নজরদারি বাড়ানো হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবসময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হলেও সাম্প্রতিক এই ঘটনা সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে শিক্ষাঙ্গনের শান্ত পরিবেশ পুনরুদ্ধার হয়।



