ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে ভয়াবহ পদদলনের ঘটনায় অন্তত ৪০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর শোকে ভেঙে পড়েছেন অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদে রূপ নেওয়া জনপ্রিয় নেতা থালাপতি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তিনি এতটাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত যে ঘটনার পর থেকে তিনি কোনো খাবারই গ্রহণ করেননি।
গত শনিবার সন্ধ্যায় তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক সমাবেশে বিপুল জনসমাগম ঘটে। প্রচণ্ড গরম ও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এক পর্যায়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয় এবং তাতে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, আর সেই বিশৃঙ্খল অবস্থাতেই নারী ও শিশুসহ ৪০ জনের মৃত্যু ঘটে। আহত হন প্রায় ১০০ জন।
থালাপতির রাজনৈতিক দলীয় সূত্র জানায়, এই ঘটনা তাদের নেতাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। তিনি নিজেও এই বিপর্যয়ে অসহায় বোধ করছেন। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নিহতদের পরিবারকে ২০ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি আহতদের প্রত্যেককে ২ লাখ রুপি করে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন থালাপতি।
এদিকে, এ ঘটনার পর ভারতীয় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পদদলিত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে দলটির দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে, এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উঠেছে। দলীয় পক্ষ থেকে সিবিআই অথবা আদালতের তত্ত্বাবধানে একটি স্বাধীন তদন্ত চাওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ঘটনার পরপরই থালাপতিকে মৌখিক নির্দেশে কারুর এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে চেন্নাই ফিরে আসেন। তবে এখানেই শেষ নয়। ঘটনার পর থেকে তার চেন্নাইয়ের নীলঙ্কারাইয়ে অবস্থিত বাড়িতে বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়। এতে পুলিশ তার বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে।
চেন্নাই পুলিশ জানায়, হুমকি পাওয়ার পরপরই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ডগ স্কোয়াড ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল তার বাড়ির ভেতরে বিস্তারিত তল্লাশি চালায়। তবে পরিদর্শন শেষে জানানো হয়, সম্ভাব্য কোনো বিপদ নেই এবং বাড়ির প্রতিটি অংশ নিরাপদ রয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় থালাপতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমার হৃদয়ে যে ব্যথা সৃষ্টি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।” সমর্থক ও ভক্তদের উদ্দেশ্যে তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু তামিলনাড়ুর মানুষকেই নয়, গোটা ভারতের জনমানসে তীব্র শোকের সঞ্চার করেছে। সমাবেশে প্রাণহানি রাজনৈতিক অঙ্গনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, আর একই সঙ্গে একজন নেতার মানসিক অবস্থার চিত্রও স্পষ্ট করেছে।