Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeইমিগ্রেশন তথ্যরঙিন পোশাকে প্রতিবাদের নতুন ভাষা: পোর্টল্যান্ডে ‘অপারেশন ইনফ্লেশন’ আন্দোলনের হাস্যরসের প্রতিবাদ

রঙিন পোশাকে প্রতিবাদের নতুন ভাষা: পোর্টল্যান্ডে ‘অপারেশন ইনফ্লেশন’ আন্দোলনের হাস্যরসের প্রতিবাদ

ওরেগনের পোর্টল্যান্ড শহরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এক অভিনব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। নাচছে ব্যাঙ, ময়ূর, ইউনিকর্ন, এমনকি র্যাকুনও! তবে এগুলো কোনো সার্কাসের নয়—এগুলো একদল প্রতিবাদকারীর সৃজনশীল প্রতিবাদের অংশ, যারা অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে অভিবাসন দপ্তরের ভবনের সামনে কয়েকজন মানুষ নানা প্রাণীর পোশাক পরে নাচছিলেন, পেছনে বাজছিল জনপ্রিয় গায়িকা শেয়ারের গান “If I Could Turn Back Time”। ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে ক্যামোফ্লাজ পোশাকে থাকা ফেডারেল এজেন্টরা তাকিয়ে ছিলেন এই দৃশ্যের দিকে। অপর পাশে “ফ্রগ ব্রিগেড” নামে পরিচিত তিনজন কর্মী ব্যাঙের পোশাক পরে নাচছিলেন ও হাসিমুখে ছবি তুলছিলেন। কাছেই কিছু পাল্টা প্রতিবাদকারী স্লোগান দিচ্ছিলেন, “We love you, ICE!”

শহরের দক্ষিণে অবস্থিত এই ভবনের সামনে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে চলছে এমন দৃশ্য। প্রতিবাদকারীদের দাবি, এটি তাদের আনন্দের প্রকাশ, একইসঙ্গে সরকারের প্রচারিত “যুদ্ধক্ষেত্র” চিত্রের প্রতিবাদ। তারা বলেন, এই কস্টিউমগুলো শুধু প্রতীকই নয়—গ্যাস ও বিষাক্ত পদার্থ থেকে কিছুটা সুরক্ষাও দেয়।

প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এক সংগঠক জানান, তিনি ওই রাতে প্রায় ৩০টি ইনফ্ল্যাটেবল পোশাক বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। তার ভাষায়, “যখন আমাদের হাস্যকর বলে অভিযুক্ত করা হয়, আমরা হাস্যরস দিয়েই তাদের কৌশল ভেঙে দিই।”

অবশ্য শহরের সামাজিক বাস্তবতা একেবারে সমস্যা–মুক্ত নয়। প্রায় ৭,০০০ গৃহহীন নাগরিকের শহরে সাধারণ হামলার ঘটনা ৮% বেড়েছে, যদিও হত্যাকাণ্ড অর্ধেকে নেমেছে এবং সামগ্রিক অপরাধের হার স্থিতিশীল।

“চিকেন ম্যান” নামে পরিচিত এক প্রতিবাদকারী জানান, তিনি প্রথম এই ধরনের পোশাক পরে নামেন ওয়াশিংটনে এক সামরিক প্রদর্শনের সময়। তার উদ্দেশ্য ছিল শক্তির প্রদর্শন নয়, বরং ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখানো।

যখন অভিবাসন অভিযান আরও জোরদার হয় এবং পোর্টল্যান্ডের বিক্ষোভকে লক্ষ্য করা শুরু হয়, তখন এই কস্টিউমগুলো নতুন অর্থ পায়—এগুলো হয়ে ওঠে অহিংস প্রতিরোধের প্রতীক।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই সৃজনশীল আন্দোলন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংবাদমাধ্যম এই দৃশ্যের খবর প্রচার করেছে, যেখানে দেখা গেছে ইউনিকর্ন, ডাইনোসর ও র্যাকুন একসঙ্গে নাচছে অভিবাসন অফিসের সামনে।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ এখনো প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এক ফেডারেল শুনানিতে সরকারের আইনজীবী জানান, বিক্ষোভকারীরা নাকি সহিংস আচরণ করছেন, পাথর ছুড়ছেন ও গাড়ি আটকাচ্ছেন। যদিও স্থানীয় প্রতিনিধিরা একে “বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন বর্ণনা” বলে অভিহিত করেছেন।

শহরের অনেক নাগরিক অভিযোগ তুলেছেন, এজেন্টদের ব্যবহৃত গ্যাস ও টক্সিনের কারণে তাদের শ্বাসযন্ত্র ও চোখে জ্বালা হচ্ছে। তবুও প্রতিবাদ থেমে নেই।

একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, তিনি “অপারেশন ইনফ্লেশন” নামে একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন যাতে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে কিন্তু ব্যতিক্রমী ভঙ্গিতে প্রতিবাদ জানাতে পারে। তার কথায়, “মানুষের উচিত প্রতিবাদের অধিকার পাওয়া, ভয় নয়।”

সেদিন রাতে “উইনি দ্য পুহ” চরিত্রের ‘টিগার’-এর পোশাক পরে আসা এক স্থানীয় নারী জানান, তিনি সাধারণত বই পড়ে প্রতিবাদের শান্ত ভাব তুলে ধরেন, তবে এবার পোশাক পরে এসেছেন সংহতি প্রকাশ করতে। তার মতে, ব্যাঙের কস্টিউম এখন অহিংস প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

রাতের শেষ দিকে বাতাসে টিয়ারগ্যাসের গন্ধ ছড়ালেও কেউ থেমে থাকেনি। বরং ইউনিকর্ন, ভালুক, হাঙর ও কাঠবিড়ালির পোশাকে মানুষগুলো একসঙ্গে নেচেছে—একটি শহরের হাস্যরসের মধ্য দিয়ে প্রতিরোধের বার্তা ছড়িয়ে দিতে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments