সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এক সাবেক চার তারকা জেনারেল সম্প্রতি নিউইয়র্কে একই মঞ্চে বসে সাক্ষাৎকার দেন। ঘটনাটি উভয়ের কাছেই ছিল অস্বাভাবিক, কারণ বহু বছর আগে এই মার্কিন জেনারেলই যুদ্ধের সময় আল-শারাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন।
গত বছর ডিসেম্বরের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দীর্ঘ ৫০ বছরের আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন আল-শারা। জানুয়ারিতে তিনি সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। তাঁর এই ক্ষমতায় আসা ছিল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক বড় মোড় পরিবর্তনের ঘটনা।
অন্যদিকে, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে সেনা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক জেনারেল। সেই অভিযানের সময়ই ২০০৬ সালে আল-শারা মার্কিন বাহিনীর হাতে আটক হন এবং টানা পাঁচ বছর কারাগারে কাটান। পরবর্তীতে ওই সেনা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার নেতৃত্বও দেন।
কারাগার থেকে মুক্তির পর ২০১২ সালে আল-শারা গড়ে তোলেন আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে এক সশস্ত্র সংগঠন। যদিও কয়েক বছর পর তিনি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং পরবর্তীতে বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গঠন করেন। এ সংগঠনকেই ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। তবে চলতি বছরের জুলাইয়ে ওয়াশিংটন আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ার প্রতি নরম অবস্থান নেয় এবং ওই ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে। একই সঙ্গে আল-শারাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ঘোষিত এক কোটি মার্কিন ডলারের পুরস্কারও বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আল-শারা সম্প্রতি নিউইয়র্কে পৌঁছান। প্রায় ছয় দশক পর কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিলেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং একাধিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
‘কনকর্ডিয়া অ্যানুয়াল সামিট’-এর মঞ্চে আল-শারা ও মার্কিন সাবেক জেনারেল একসঙ্গে বসেন। এটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সঙ্গে সমন্বিত বৈশ্বিক ফোরাম, যেখানে বিশ্বনেতা, ব্যবসায়ী ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মঞ্চে জেনারেল স্বীকার করেন, এই দৃশ্যটা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, তবে তিনি আল-শারার রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রশংসা করেন। তাঁর ভাষায়, একজন বিদ্রোহী নেতার রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ওঠা মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় ঘটনা।
আল-শারা ইতিমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, সিরিয়ায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি অক্টোবরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে সাবেক জেনারেল আল-শারার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জানতে চান তিনি পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছেন কি না। তিনি বলেন, আল-শারার অসংখ্য ভক্ত আছেন এবং তিনি নিজেও তাঁদের একজন।
সেই মঞ্চে আল-শারা অতীতের সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, একসময় তাঁরা যুদ্ধ করেছেন, আর এখন তাঁরা আলোচনার টেবিলে বসেছেন। তাঁর ভাষায়, “যাঁরা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন, তাঁরা শান্তির গুরুত্ব বোঝেন। অতীতকে আজকের নিয়মে বিচার করা যায় না, আবার বর্তমানকেও অতীতের মানদণ্ডে দেখা উচিত নয়।”
একসময় আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়ে আল-শারা স্বীকার করেন, তখন কিছু ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে এখন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হলো সিরিয়ার জনগণ এবং গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করা।
তিনি আরও যোগ করেন, “সেই অঙ্গীকারই আমাদের আজ নিউইয়র্কে এনেছে। আজ আমরা একত্রে, সহযোগী ও বন্ধুদের মধ্যে বসে আছি।”