দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে চলমান সংঘাতের মাঝেই পাকিস্তান ও আফগানিস্তান নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও দুই দেশের সীমান্তজুড়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বরং একের পর এক হামলার ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। সর্বশেষ হামলায় আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে স্থানীয় আট ক্রিকেটারসহ অন্তত ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুই দেশের পক্ষ থেকেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ওঠায় সীমান্ত পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিয়েছে। আফগান কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কিছু ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায়। স্থানীয় পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পাকতিকা প্রদেশসহ সীমান্তসংলগ্ন দুই এলাকায় বিমান হামলা হয়, যার মধ্যে খানাদার গ্রামের একটি বাড়িতেও বোমা ফেলা হয়। এতে বেসামরিক হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
এদিকে, একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকতিকা প্রদেশের বারমাল ও উরগুন এলাকায় বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রাদেশিক হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। আফগান ক্রিকেট বোর্ডের এক মুখপাত্রের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে আটজন স্থানীয় ক্রিকেটার ছিলেন, যারা একটি স্থানীয় ম্যাচ খেলে ফেরার পথে প্রাণ হারান।
বিমান হামলার বিষয়ে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। তবে পাকিস্তানের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “যুদ্ধবিরতি আফগান তালেবানের সঙ্গে হয়েছে, কিন্তু আফগান ভূখণ্ডে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে নয়, যারা পাকিস্তানে হামলা চালায়।”
এর আগে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা জানান, সীমান্তের কাছে তাদের এক সামরিক স্থাপনায় আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানো হয়, যা পাকিস্তানি তালেবানের (টিটিপি) সহায়তায় সংঘটিত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওই হামলায় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।
উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মির আলী শহরের সামরিক কম্পাউন্ডে এই আত্মঘাতী হামলায় হতাহতের পরিসংখ্যান নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বলছেন তিনজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন, আবার কেউ বলছেন সাতজন সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। হামলার পরপরই কম্পাউন্ডে প্রবেশের চেষ্টা করা দুই যোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুরো ঘটনায় অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হামলায় টিটিপির চার সদস্য নিহত হয়েছে এবং বাহিনীর তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ঘটনার জেরে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ক্রমবর্ধমান এই সংঘাতের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতিনিধিরা আলোচনার টেবিলে ফিরতে চলেছেন। কাতারের রাজধানী দোহায় দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যেই দোহায় পৌঁছেছে, এবং আফগান প্রতিনিধিরা শনিবার সেখানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে সীমান্তের উত্তেজনা প্রশমনের সম্ভাবনা নিয়েই আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো আবারও প্রমাণ করছে, সীমান্তের পরিস্থিতি কতটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা যতই হোক, বাস্তবে রক্তপাত থামছে না। সীমান্তের দুই পাশে নিরীহ মানুষের জীবন যাচ্ছে, আর কূটনৈতিক আলোচনা থেমে আছে পারস্পরিক অভিযোগ–বিবাদে।



