Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeইমিগ্রেশন তথ্যযুক্তরাষ্ট্রে H-1B ভিসার পরিবর্তন: কানাডার সামনে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

যুক্তরাষ্ট্রে H-1B ভিসার পরিবর্তন: কানাডার সামনে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় দক্ষ কর্মী ভিসা প্রোগ্রাম H-1B–এর ফি বহুগুণ বাড়ানোয় নতুন করে আলোচনায় এসেছে কানাডার সুযোগ-সুবিধা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সময় কানাডার উচিত এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দক্ষ অভিবাসীদের দিকে হাত বাড়ানো। তবে সতর্কতাও রয়েছে—কারণ কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থারও রয়েছে নিজস্ব চ্যালেঞ্জ।

সম্প্রতি এক বক্তৃতায় কানাডার প্রধান নির্বাহী উল্লেখ করেন, দেশটির নিজস্ব গবেষণা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিপুল প্রতিভা তৈরি হলেও তাদের বড় একটি অংশ শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। তিনি ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নীতির পরিবর্তনের ফলে কানাডা চাইলে এই প্রতিভাধারীদের কিছুটা ধরে রাখতে সক্ষম হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন H-1B আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ডলার। এই ঘোষণা প্রযুক্তি খাতকে বিস্মিত করেছে। বহু বছর ধরে এই ভিসার ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিকল্প পথ খুঁজছে। যদিও বর্তমান H-1B ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে না, তবুও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় কর্মীরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এই পরিস্থিতিকে “চমৎকার সুযোগ” হিসেবে দেখছেন কানাডাভিত্তিক অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কানাডা চাইলে সহজেই এই দক্ষ জনশক্তিকে টেনে নিতে পারে। এক বেসরকারি সংস্থা ইতোমধ্যেই কানাডাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাদ পড়া শত-সহস্র দক্ষ কর্মী কানাডার মতো উচ্চমানের জীবনযাত্রা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং ভূগোলগত সুবিধাযুক্ত দেশে আসতে আগ্রহী হতে পারেন।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতীতে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার সীমা কমে গেলে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত, চীন এবং কানাডার মতো দেশে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। সেই সময়ে কানাডার উন্মুক্ত নীতিমালার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই কর্মীদের সেখানে স্থানান্তর করতে পেরেছিল।

এরই মধ্যে প্রমাণ মিলেছে, H-1B ভিসাধারীরা কানাডাকে বিকল্প হিসেবে ভাবছেন। ২০২৩ সালে কানাডা সরকার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক H-1B ধারীদের জন্য তিন বছরের ওয়ার্ক পারমিট চালু করে। মাত্র একদিনেই ১০ হাজার আবেদন জমা পড়ে। যদিও কতজন বাস্তবে কানাডায় স্থানান্তরিত হয়েছেন তা স্পষ্ট নয়, তবে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নবায়নে ব্যর্থ হয়ে কানাডায় স্থায়ী হয়েছেন।

তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থায় অনেকেই ভোগান্তিতে পড়ছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণ করতে হলে কানাডাকে আরও ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। কারণ, দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসন কোটা কমানো হয়েছে। এছাড়া অস্থায়ী বিদেশি কর্মী কর্মসূচি নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কানাডায় গড় বেতন তুলনামূলক কম হওয়ায় অনেক দক্ষ কর্মী অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তবুও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দক্ষ অভিবাসন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা ও উদ্ভাবনী খাতে যেভাবে প্রবৃদ্ধি এনেছে, কানাডাও চাইলে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে।

কানাডার ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ বিভাগ জানিয়েছে, দক্ষ কর্মী আকর্ষণে ইতোমধ্যেই এক্সপ্রেস এন্ট্রি এবং গ্লোবাল স্কিলস স্ট্র্যাটেজি প্রোগ্রামের মতো পথ উন্মুক্ত রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের H-1B ভিসার পরিবর্তন কানাডার জন্য যেমন সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনি নিজস্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সেই সুযোগ কাজে লাগানো এখন সময়ের দাবি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments