যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যে সামরিক বাহিনীর জন্য বিস্ফোরক তৈরির একটি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এখনো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের সন্ধান চলছে।
শুক্রবার সকাল পৌনে আটটার দিকে টেনেসির বাকসনর্ট শহরে অবস্থিত একটি বিস্ফোরক তৈরির কারখানায় হঠাৎ করেই এই বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চলছে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে দমকল বাহিনী। প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
কারখানাটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, যা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য বিস্ফোরক সরবরাহ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি শুধু সামরিক খাতে নয়, বরং বেসরকারি শিল্প, বিমান ও মহাকাশ প্রযুক্তির জন্যও বিস্ফোরক ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ তৈরি করে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটির মূল কার্যালয় প্রায় ১ হাজার ৩০০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত, যেখানে কারখানা ছাড়াও রয়েছে গবেষণাগার ও পরীক্ষাগার। বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও জরুরি সহায়তা দল। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য আশপাশের এলাকা সাময়িকভাবে খালি করা হয়েছে।
একজন স্থানীয় কর্মকর্তা জানান, “বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে কয়েক মাইল দূর থেকেও সেটি শোনা গেছে। ভবনের ছাদ ও দেয়ালের কিছু অংশ ধসে পড়েছে।” আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং নিখোঁজদের খোঁজে বিশেষ অনুসন্ধান দল কাজ করছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত নিহতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকাজ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করা হবে না। ঘটনাস্থলে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হয়েছে, যারা বিস্ফোরণের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করবে।
উল্লেখযোগ্য যে, এর আগে ২০১৪ সালেও একই কারখানায় গোলাবারুদ সংক্রান্ত একটি ছোট বিস্ফোরণ ঘটেছিল। সে সময় একজন কর্মী নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছিলেন। তবে ওই ঘটনার পর থেকে কারখানায় বড় কোনো নিরাপত্তা ত্রুটি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বর্তমান ঘটনায় আবারও কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তারা এখন ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ড পুনর্বিবেচনা করা হবে।
বিস্ফোরণের পর এলাকাজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণকে কারখানার আশপাশে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, নিহতদের পরিবারকে সহায়তা দিতে বিশেষ তহবিল গঠনের কথাও জানানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ যাই হোক না কেন, এই মর্মান্তিক বিস্ফোরণ আবারও মনে করিয়ে দিল—বিস্ফোরক তৈরির মতো ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সামান্য ত্রুটিও কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।



