Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকযুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনে আকাশপথে বিশৃঙ্খলা: ৫ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনে আকাশপথে বিশৃঙ্খলা: ৫ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক প্রশাসনিক শাটডাউনের প্রভাব পড়েছে আকাশপথে। দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ রুটে পাঁচ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, পাশাপাশি হাজারো ফ্লাইট ছেড়েছে দীর্ঘ দেরিতে। সরকারি কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাওয়ায় বিমানবন্দরে দেখা দিয়েছে কর্মী সংকট, যার ফলে উড়োজাহাজ চলাচলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারি কর্মীদের বেতন ও কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর কার্যত আংশিকভাবে অচল হয়ে পড়েছে। শুক্রবার এক দিনে বিপুল সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।

ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন শহরের বিমানবন্দরে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। ওয়াশিংটনের রেগান বিমানবন্দরে গড়ে প্রতিটি ফ্লাইট ২৪০ মিনিট বা চার ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। এদিকে দেশটির পরিবহন বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রায় ৪ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল হলেও পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তা আগামী সপ্তাহে ১০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

বড় আকারের এয়ারলাইন্সগুলো—যেমন আমেরিকান, সাউথওয়েস্ট ও ডেলটা—তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, যাত্রীদের অসুবিধা বিবেচনা করে তারা বিনা মূল্যে ফ্লাইট পরিবর্তনের সুযোগ দিচ্ছে। পাশাপাশি বাতিল হওয়া ফ্লাইটের টিকিটের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো ও ওয়াশিংটন ডিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের বিমানবন্দরগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। শাটডাউনের কারণে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় বিমান ওঠানামার সময়সূচি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ফ্লাইট সংখ্যা ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এতে করে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় রুটেই প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত (গ্রিনিচ সময় ১১টা ৩০ মিনিট) ৫,৩০০টিরও বেশি ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে। এর মধ্যে রেগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে—যেখানে গড়ে প্রতিটি ফ্লাইট চার ঘণ্টা বিলম্বিত হয়েছে, ১৭ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল এবং প্রায় ৪০ শতাংশ দেরিতে ছেড়েছে।

সরকারি শাটডাউন চলমান থাকায় দেশজুড়ে ১৩ হাজারেরও বেশি উড়োজাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রক এবং ৫০ হাজার নিরাপত্তা তল্লাশি কর্মকর্তা বেতন ছাড়া দায়িত্ব পালন করছেন। এ অবস্থায় অনেকে কাজ থেকে বিরত থাকছেন বা অনুপস্থিত রয়েছেন, যার ফলে বিমান চলাচলে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়ছে।

এ ছাড়া জানা গেছে, কয়েকজন বিমান নিয়ন্ত্রককে সম্প্রতি জানানো হয়েছে যে তারা আগামী সপ্তাহেও দ্বিতীয়বারের মতো কোনো বেতন পাবেন না। ফলে কর্মীদের মধ্যে মনোবল ভীষণভাবে নেমে গেছে এবং এ অবস্থা যতদিন চলবে, বিমান চলাচলে তত বেশি প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

দেশটির আকাশপথে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ৩৮ দিন ধরে চলা শাটডাউনের সরাসরি ফল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনিক অচলাবস্থা অবসান না হলে শুধু ফ্লাইট নয়, পুরো বিমান চলাচল ব্যবস্থাই সংকটে পড়ে যাবে, যা আন্তর্জাতিক যাতায়াতেও প্রভাব ফেলবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments