যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে রসায়নে পিএইচডি করছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মেয়ে মমতা আক্তার। বৃত্তি পেয়ে তিনি বর্তমানে কাজ করছেন প্রাণঘাতী গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ও টেকসই টিকা উদ্ভাবনের গবেষণায়। সেখানে তিনি রসায়ন বিভাগের গ্র্যাজুয়েট টিচিং ও রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন একজন অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে।
মমতার শিক্ষাজীবনের শুরু বাংলাদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) রসায়ন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে নিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করার সুযোগ পান বৃত্তি নিয়ে।
তবে এই যাত্রা তাঁর জন্য মোটেও সহজ ছিল না। একজন নারী হিসেবে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে আসার পথে নানা বাধা ও সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। তিনি জানান, আর্থিক অনটনের কারণে টিউশন ফি, বই কেনা ও শিক্ষাসংক্রান্ত খরচ জোগানো ছিল কঠিন কাজ। কিন্তু কঠিন বাস্তবতার মাঝেও পড়াশোনায় অবিচল থেকেছেন এবং নিজেকে এগিয়ে নিতে দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের একাডেমিক জীবনে তাঁকে কিছুটা সাহস দিয়েছে, তবে পরিবেশের পার্থক্য ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ভিন্নধর্মী শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণার ধরণ ও কাজের পদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে নতুন করে। মমতার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের নিজের মতামত প্রকাশে উৎসাহিত করে—যা বাংলাদেশের প্রচলিত ব্যবস্থায় তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। ফলে শুরুতে নিজেকে মানিয়ে নিতে অনেক সময় ও পরিশ্রম দিতে হয়েছে।
ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে এখানকার একাডেমিক ইংরেজির সঙ্গে অভ্যস্ত হতে প্রচুর অনুশীলন করতে হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার বিষয়গুলোও ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। অনলাইন কোর্স ম্যানেজমেন্ট, গবেষণা ডেটাবেজ ও বিশ্লেষণধর্মী সফটওয়্যার শেখা তাঁর জন্য ছিল কঠিন, তবে ধৈর্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি সেসব আয়ত্ত করেছেন।
এছাড়া মমতা আক্তার বর্তমানে বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড বায়োকেমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকার (বিএসিএবিএএনএ) মিশিগান চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, এই সংগঠন শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের জন্য নেটওয়ার্কিং ইভেন্টের আয়োজন করে, যেখানে শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও একাডেমিকদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয়। এসব ইভেন্টের মাধ্যমে অনেকেই উত্তর আমেরিকায় চাকরি, ইন্টার্নশিপ বা পোস্টডক্টরাল গবেষণার সুযোগ পান।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মমতার পরামর্শ হলো—যাঁরা বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে চান, তাঁদের দেশে থাকতেই গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। বিশেষ করে রসায়নের শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, শুধুমাত্র বিক্রিয়ার মুখস্থবিদ্যায় নয়, বরং প্রতিটি বিক্রিয়ার পেছনের মূল নীতি ও প্রক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করা উচিত। এতে গবেষণামুখী চিন্তা বিকশিত হবে এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়াও সহজ হবে।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মমতা মনে করেন, পরিশ্রম, ধৈর্য এবং শেখার আগ্রহ থাকলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। তাঁর মতো আরও তরুণ গবেষকেরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে বিজ্ঞান ও গবেষণায় নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে—এই আশাই তিনি ব্যক্ত করেছেন।



