যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এই শরৎ সেমিস্টারে বেশ স্থিতিশীল থাকলেও, নতুন করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। ভিসানীতিতে কঠোরতা বাড়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও সামগ্রিক ভর্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পতন দেখা না গেলেও বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিষয়ক গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহকারী একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এই শরতে বিদেশি শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা প্রায় ১% কমেছে। তবে এই সংখ্যাটি মূলত ধরে রেখেছে সেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির কারণে, যারা স্নাতক শেষে যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।
অন্যদিকে, নতুন করে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১৭%, যা কোভিড–১৯ মহামারির পর সবচেয়ে বড় পতন।
জরিপে বলা হয়েছে, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় টিউশন আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। তবুও সামগ্রিক চিত্রটি আগের আশঙ্কার চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো। গবেষকের মতে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসা প্রক্রিয়া সহজে সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থীদের জন্য নানাবিধ সহায়তা দিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে।
শরৎ সেমিস্টারের শুরুতে অংশ নেওয়া ৮০০-এর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৬০% প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমে গেছে, যেখানে ৩০% প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির কথা বলেছে এবং বাকিরা সংখ্যাকে আগের মতোই পেয়েছে।
ভর্তিতে প্রভাব ফেলছে কঠোর ভিসা নীতি
যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী নির্ভরতাকে কমানোর জন্য প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তন আন্তর্জাতিক ভর্তিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কয়েক মাস আগে ভিসা সাক্ষাৎকার সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর ভিসা যাচাই আরও কঠোর করা হয়েছে।
এছাড়া ভারতসহ কিছু দেশে ভিসা প্রসেসিং এখনও পিছিয়ে রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি শিক্ষার্থী উৎস দেশের জন্য বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। শিক্ষা–পরামর্শ প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলো এখন শিক্ষার্থীদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
এক আন্তর্জাতিক ভর্তিব্যবস্থাপনা সংস্থার এক নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা হতে পারে। বিশেষ করে ২০২৬ ও ২০২৭ শিক্ষাবর্ষে আরও বড় পতন দেখা দিতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বড় ধরনের হ্রাস
এই শরতে বিদেশি স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী কমেছে ১২%, যা মোট বিদেশি শিক্ষার্থী কমার অন্যতম প্রধান কারণ। যদিও “অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং”–এ অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ায় সামগ্রিক ভর্তির সংখ্যা কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা সামান্য বেড়েছে।
বিজ্ঞান, গণিত, প্রযুক্তি ও ব্যবসায় শিক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ঐতিহ্যগতভাবেই বেশি। তবে ভিসা জটিলতা ও ভ্রমণ–বাধার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য হারে শিক্ষার্থী হারিয়েছে।
বাজেটে ধাক্কা খাচ্ছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়
মাঝারি ও আঞ্চলিক অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ভর্তিতে পতন বাজেট ঘাটতি তৈরি করেছে। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে অতিরিক্ত খরচ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বড় জনস্বাস্থ্য ও গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার সরাসরি প্রভাব অনুভব করেছে।
জরিপে আরও জানা গেছে, বিদেশি শিক্ষার্থী যাঁরা সময়মতো যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারেননি, তাদের জন্য প্রায় ৭৫% বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি স্থগিতের সুযোগ দিচ্ছে। কেউ কেউ পরবর্তী বছরের শরৎ সেমিস্টার পর্যন্ত ভর্তির সময় বাড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে দেখছে। যেমন—জার্মানি, কানাডা ও আরও কয়েকটি দেশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এসব দেশে ভিসা নীতি তুলনামূলক সহজ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি স্বাগত–সুলভ মনোভাব বেশি, যা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে বড় সংকট তৈরি না হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মনে করছে, বর্তমান অস্থিরতা ধরে রাখলে আগামী কয়েক বছরের ভর্তির প্রবণতা পরিবর্তন হতে পারে।



