Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকযুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে কিছু ভিসাধারীকে দিতে হবে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত জামানত

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে কিছু ভিসাধারীকে দিতে হবে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত জামানত

যুক্তরাষ্ট্রে নির্দিষ্ট কিছু দেশের ভ্রমণকারীদের প্রবেশের আগে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত আর্থিক জামানত (বন্ড) দিতে হতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে, যা দেশটির অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

নতুন পরীক্ষামূলক কর্মসূচি ২০ আগস্ট থেকে শুরু হবে এবং এটি আগামী ১২ মাস ধরে চলবে। এ নিয়ম প্রধানত বি-১ (ব্যবসায়িক) এবং বি-২ (পর্যটন) ভিসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত অস্থায়ী নীতিমালার তথ্য অনুযায়ী, এই কর্মসূচি মূলত সেই দেশের নাগরিকদের লক্ষ্য করবে, যাদের ভিসাধারীরা অনুমোদিত মেয়াদ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে যারা জামানতের শর্ত মেনে চলবেন, তাদের জমাকৃত অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।

বর্তমানে জাম্বিয়া ও মালাবির নাগরিকরা এই নতুন নিয়মের প্রথম লক্ষ্যবস্তু। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে কিছু দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং নতুন ভিসা ফি চালু করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন নিয়ম অনুসারে, যেসব দেশের নাগরিকদের ভিসা মেয়াদ উত্তীর্ণের হার বেশি, তাদের জন্য এই জামানত বাধ্যতামূলক। তবে কানাডা ও মেক্সিকো এবং ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া ৪০টির বেশি দেশের নাগরিক এই নিয়মের বাইরে থাকবেন। এ কর্মসূচির অধীনে নাগরিকরা ৯০ দিন পর্যন্ত ব্যবসা বা পর্যটনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন।


ভিসা বন্ড কী

ভিসা বন্ড হলো এক ধরনের আর্থিক নিশ্চয়তা। কিছু দেশ বিদেশি নাগরিকদের সাময়িক ভিসা দেওয়ার আগে এই জামানত নেন, যাতে তারা ভিসার শর্ত পূরণ করে, বিশেষ করে অনুমোদিত মেয়াদের মধ্যে দেশে ফিরে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী, পর্যটক ও অস্থায়ী কর্মী নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসার মাধ্যমে প্রবেশ করেন। এই ভিসার মেয়াদ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত হতে পারে।

যদি কোনো ভিসাধারী অনুমোদিত মেয়াদ পেরিয়ে দেশে অবস্থান করেন, তাহলে তাকে ভিসা ‘ওভারস্টে’ বলা হয়। বেশিরভাগ দেশই ভিসা দেওয়ার আগে আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করে। তবে ফেরতযোগ্য জামানতের ব্যবস্থা সব দেশে নেই।


জামানতের পরিমাণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত বন্ড তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে—৫ হাজার, ১০ হাজার ও ১৫ হাজার ডলার। পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পরীক্ষামূলক কর্মসূচি চলাকালে প্রায় দুই হাজার ভিসা আবেদনকারীকে জামানত দিতে হবে।

জামানতের পরিমাণ কনস্যুলার কর্মকর্তারা নির্ধারণ করবেন। তারা আবেদনকারীর ভ্রমণের কারণ, চাকরি, আয়, দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করবেন। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন সরকারি কর্মচারীদের ভ্রমণ বা জরুরি মানবিক পরিস্থিতি, জামানত মওকুফ করা যেতে পারে।


অতীতের অভিজ্ঞতা

২০২০ সালে একই ধরনের কর্মসূচি চালুর চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে বৈশ্বিক মহামারির কারণে এটি কার্যকর হয়নি। পররাষ্ট্র দপ্তর উল্লেখ করেছে, ভিসা বন্ড নেওয়া অতীতে কম হয়েছে কারণ এটি প্রক্রিয়া হিসেবে জটিল এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে সাম্প্রতিক কোনো প্রমাণ নেই যে, ভিসা বন্ড কার্যকরভাবে নেওয়া হয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে দেখা গেছে, অনেক বিদেশি নাগরিক ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলেও নির্ধারিত সময়ে দেশ ছাড়েন না।


প্রভাবিত দেশসমূহ

প্রাথমিকভাবে জাম্বিয়া ও মালাবির নাগরিকদের উপর এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। যদি অন্য দেশের ভিসাধারীর মধ্যে ভিসা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার হার বেশি হয়, স্ক্রিনিং দুর্বল থাকে বা তারা বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে, তাদেরও তালিকাভুক্ত করা হতে পারে।

বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব প্রদানকারী দেশগুলোতে বসবাসের কোনো শর্ত থাকে না। এই ধরনের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, অস্ট্রিয়া, জর্ডান, সেন্ট লুসিয়া ও তুরস্ক।


ভিসা ওভারস্টে হার

২০২৩ অর্থবছরে দেখা গেছে, আফ্রিকার কিছু দেশ, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার ও ইয়েমেনের ভিসাধারীদের মধ্যে অনুমোদিত মেয়াদের পরও যুক্তরাষ্ট্রে থাকার হার সবচেয়ে বেশি। ট্রাম্প প্রশাসনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন দেশগুলোর মধ্যে অনেকেরই ভিসা ওভারস্টে হার বেশি।

মার্কিন অভিবাসন গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ৪ লাখ মানুষ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছিলেন। ১৯৯০-এর দশকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা অভিবাসীদের একটি বড় অংশেরই ভিসা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments