Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনযুক্তরাষ্ট্রে নতুন ২৫০ ডলারের ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’ কাল থেকে কার্যকর

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ২৫০ ডলারের ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’ কাল থেকে কার্যকর

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বা পড়াশোনার জন্য যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীসহ নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারীদের জন্য আগামীকাল বুধবার থেকে চালু হচ্ছে নতুন একটি ফি—‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’। এই ফি’র আওতায় সাময়িকভাবে ভ্রমণ, শিক্ষা বা কাজের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া প্রত্যেককেই অতিরিক্ত ২৫০ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০,৪১৮ টাকা, প্রতি ডলার ১২১ টাকা হিসেবে) প্রদান করতে হবে।

এই পদক্ষেপটি মূলত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’-এর অধীনে চালু হয়েছে। ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই ফি শিক্ষার্থী ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ, গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কড়াকড়ি অভিবাসন নীতির কারণে বিদেশি ভ্রমণকারীর সংখ্যা আগেই হ্রাস পেয়েছে।

নতুন ফি মওকুফের কোনো সুযোগ থাকবে না। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি চাইলে এই ফি ভবিষ্যতে আরও বাড়াতে পারবে, এমনকি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেও সমন্বয় করতে পারে। ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরে এই ফি কার্যকর থাকবে। তবে, যাঁদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হবে, তাঁদের এ ফি দিতে হবে না।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পাওয়ার মোট খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৪৪২ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৩,৭৮০ টাকা)। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বিশ্বের অন্যতম উচ্চ ভিসা ফি হয়ে দাঁড়াবে। এই পদক্ষেপে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে ভারত, চীন, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোর শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর সংখ্যা ৩.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, মোট ভ্রমণকারীর সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখে। টানা পাঁচ মাস ধরে এই সংখ্যা ক্রমেই কমছে।

ভ্রমণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এ ধরনের জটিলতা ভ্রমণ কমিয়ে দেবে। গ্রীষ্মকাল শেষ হওয়ার পর এই প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। অনেক ট্রাভেল সংস্থা ইতিমধ্যেই তাদের বাজেট ও পরিকল্পনায় নতুন এই খরচ যোগ করতে শুরু করেছে।

শিক্ষার্থীদের নতুন ভাবনা

উচ্চ টিউশন ফি, জীবনযাপনের ব্যয় এবং অন্যান্য খরচ সামলাতে হিমশিম খাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এই অতিরিক্ত ফি বড় চাপ হয়ে দাঁড়াবে। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা জার্মানির মতো দেশ বেছে নিতে পারেন, যেগুলো বর্তমানে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করছে এবং শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ইন্টেগ্রিটি ফি” শব্দটিই বিতর্কিত। শিক্ষার্থীরা এতে নিজেদেরকে অবদানকারী নয়, বরং কেবল অর্থ প্রদানকারী গ্রাহক হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বাস কমে গিয়ে শিক্ষার্থী প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শিক্ষা ও গবেষণায় প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ও গবেষণা খাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) ক্ষেত্রে তাঁদের ওপর নির্ভরতা বেশি। অনেক শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট সহকারী, গবেষক বা শিক্ষণ সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তাঁদের সংখ্যা কমে গেলে গবেষণায় ধীরগতি আসতে পারে, শ্রেণিকক্ষের বৈচিত্র্য হ্রাস পেতে পারে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

শিক্ষাবিদদের মতে, এই ফি মূলত অর্থ সংগ্রহের বিষয় নয়, বরং একটি ধারণার প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক মেধা আকর্ষণ করার জন্য নীতি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রয়োজন একটি দেশের প্রতি আস্থা তৈরি করা। যদি নিয়ন্ত্রণমূলক দিককে আস্থার চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান হারাতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments