Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeপ্রযুক্তি জগৎযুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ট্যাক্স সুবিধা বাড়ানোর আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ট্যাক্স সুবিধা বাড়ানোর আহ্বান

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পনীতি ও বিনিয়োগ কাঠামোতেও বড় পরিবর্তন আসছে। এই প্রেক্ষাপটে একটি শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন—চিপস অ্যাক্টের আওতায় দেওয়া ট্যাক্স ক্রেডিট বা করছাড় সুবিধার পরিধি আরও বিস্তৃত করার জন্য।

সম্প্রতি ওই নির্বাহী এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পুনঃশিল্পায়ন কৌশলকে আরও কার্যকর করতে হলে কেবলমাত্র সেমিকন্ডাক্টর নয়, বরং পুরো প্রযুক্তিগত অবকাঠামো—যেমন টারবাইন, ট্রান্সফরমার, স্টিল উৎপাদনসহ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতেও প্রণোদনা দেওয়া উচিত। তাঁর মতে, “দেশজুড়ে শিল্পায়ন বাড়ানো মানে শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং পুরো প্রযুক্তি খাত এবং অন্যান্য শিল্পও উপকৃত হবে।”

এই বক্তব্যটি আসে এমন সময়ে, যখন প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতি অফিসে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে। সেই চিঠিতে “অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং ইনভেস্টমেন্ট ক্রেডিট (AMIC)” সুবিধার আওতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সার্ভার উৎপাদন, ডেটা সেন্টার ও বিদ্যুৎ গ্রিড উপাদানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, AMIC হলো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি ফেডারেল কর প্রণোদনা কর্মসূচি, যা মূলত দেশীয় সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল। তবে প্রযুক্তি জগতে এখন যে হারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশ ঘটছে, তাতে শুধু চিপ উৎপাদনই নয়—বরং সেই চিপ চালাতে সক্ষম ডেটা সেন্টার এবং অন্যান্য শক্তি অবকাঠামোও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

প্রধান নির্বাহী তাঁর পোস্টে আরও জানান, “এই ট্যাক্স ক্রেডিট প্রোগ্রামটি কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নিশ্চয়তা নয়। বরং এটি হবে এমন একটি প্রণোদনা, যা পুরো শিল্পকে শক্তিশালী করবে।”

তবে এর আগে তিনি বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে চিপ ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য ঋণ নিশ্চয়তা (loan guarantee) নিয়ে আলোচনা করছে, কিন্তু ডেটা সেন্টারের জন্য এমন কোনো আলোচনা হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা আগামী আট বছরে প্রায় ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে কম্পিউটিং অবকাঠামো নির্মাণে। তাদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক মডেল ও পণ্যের চাহিদা এত দ্রুত বাড়ছে যে, বর্তমান ডেটা সেন্টার ও প্রসেসিং সামর্থ্য ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট নয়।

বিশ্বজুড়ে ChatGPT–এর মতো জনপ্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবাগুলোর ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এখন প্রতিযোগিতামূলকভাবে আরও আধুনিক ডেটা সেন্টার নির্মাণ ও উন্নত চিপ উৎপাদনের দিকে এগোচ্ছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে কোনো ধরনের “ফেডারেল বেইলআউট” বা সরকারি উদ্ধার তহবিল বরাদ্দের পরিকল্পনা নেই। তাঁর মতে, প্রযুক্তি খাতকে নিজেদের বিনিয়োগ পরিকল্পনাতেই অগ্রসর হতে হবে।

এই আলোচনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা এখন বড় এক প্রশ্নের মুখে—দেশের ভেতরে AI অবকাঠামো বাড়াতে কি সরকারকে করছাড় সুবিধা সম্প্রসারণ করা উচিত, নাকি এটি বাজারের স্বাভাবিক গতিতেই এগোতে দেওয়া উচিত?

যা-ই হোক না কেন, একটি বিষয় স্পষ্ট—বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্র তার নেতৃত্ব ধরে রাখতে চাইছে, আর সেই লক্ষ্য অর্জনে নীতি ও প্রণোদনার ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments