Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকযুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম কমাতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর

যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম কমাতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর

যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে নতুন এক চুক্তি করেছে মার্কিন প্রশাসন। শুক্রবার এক ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, এই চুক্তির আওতায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা সরকারের মেডিকেড স্বাস্থ্য কর্মসূচির জন্য নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ছাড়মূল্যে সরবরাহ করবে। এর বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রে তিন বছরের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

এর আগে ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের সঙ্গে সরকারের অনুরূপ একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের সমঝোতার মাধ্যমে হোয়াইট হাউস এমন একটি কাঠামো গড়ে তুলছে, যার মাধ্যমে দেশটিতে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গত জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট ১৭টি শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে চিঠি পাঠিয়ে দাম কমানোর আহ্বান জানান। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথমেই চুক্তিতে এসেছে ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী এক অনুষ্ঠানে জানান, আগামী বছর থেকে চালু হতে যাওয়া “TrumpRX” ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোম্পানিটি তাদের কিছু ওষুধ সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে বিক্রি করবে। পাশাপাশি কোম্পানিটি স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন বছরের শুল্ক ছাড়ও পাবে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রোগীরা প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধের জন্য অন্য উন্নত দেশের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করছেন। প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর ওপর দাম কমানোর চাপ দিয়ে আসছেন। তাঁর হুঁশিয়ারি—ওষুধের দাম না কমালে কঠোর শুল্ক আরোপ করা হবে। গত মাসে প্রেসিডেন্ট এমনকি কিছু কোম্পানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকিও দেন, যাতে তারা স্থানীয় উৎপাদনে আগ্রহী হয় এবং আমদানিনির্ভরতা কমায়।

ফাইজারের সঙ্গে চুক্তির পরপরই লবিস্ট ও নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশাসনের এই উদ্যোগ দেশটির ওষুধ বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

উল্লেখ্য, মেডিকেড যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ও ফেডারেল সরকারের যৌথ স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি, যা মূলত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য চালু। বর্তমানে প্রায় সাত কোটির বেশি মানুষ এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন। এই ব্যবস্থায় ওষুধের খরচ মেডিকেয়ারের তুলনায় অনেক কম। মেডিকেয়ার সাধারণত ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য পরিচালিত হয়। শুক্রবারের ঘোষণায় মেডিকেয়ারভুক্তদের এই ছাড়ের আওতায় আনা হয়নি।

২০২১ সালে মেডিকেয়ার কর্মসূচির ওষুধ ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, আর মেডিকেডে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক আট হাজার কোটি ডলার। নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের এক অধ্যাপক বলেন, “মেডিকেডের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে আগেই সবচেয়ে কম দামে ওষুধ পাওয়া যায়, তাই নতুন ছাড়ে তেমন বড় কোনো আর্থিক সাশ্রয় হবে না।”

একই মত প্রকাশ করেছেন বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহযোগী অধ্যাপকও। তাঁর মতে, “ফাইজারের মতো চুক্তি করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা শুল্কের চাপ কিছুটা কমাতে পারবে, তবে এতে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা খরচে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।”

অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী জানান, কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণে কাজ করছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদন, গবেষণা ও উন্নয়নে পাঁচ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। ভার্জিনিয়ায় গড়ে তোলা হবে তাদের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকেন্দ্র, পাশাপাশি আরও পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে কারখানা সম্প্রসারণ করা হবে।

গত সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি ঘোষণা দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডায়াবেটিস ও অ্যাজমার ওষুধ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে বিক্রি করা হবে, তবে শর্ত হলো রোগীদের নগদ অর্থে পরিশোধ করতে হবে। প্রশাসনের চাপের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা যায়।

সব মিলিয়ে, সরকারের এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র চুক্তির মাধ্যমে নয়, ওষুধ খাতের কাঠামোগত পরিবর্তন আনলেই প্রকৃত অর্থে রোগীরা সুফল পাবেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments