যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে আংশিক শাটডাউনের মুখোমুখি, কারণ কংগ্রেস নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন অর্থবছরের ব্যয় বরাদ্দ–সংক্রান্ত বিল পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের কার্যক্রমে এই অচলাবস্থা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়েছেন, যদি আইনপ্রণেতারা বিল পাস না করেন, তবে আরও অনেক সরকারি কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। তবে এই শাটডাউনে কোন খাতে কতটা অর্থ কমানো হবে, তার সুস্পষ্ট রূপরেখা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের মোট ২৩টি বড় সংস্থার মধ্যে ২১টি সংস্থা সাময়িক ছুটিতে পাঠানো কর্মীদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। ১৯৮০ সালের পর থেকে মার্কিন সরকারের কার্যক্রম ১৫ বার আংশিকভাবে বন্ধ হয়েছে। তবে এবারকার শাটডাউনের সম্ভাব্য প্রভাব পূর্বের তুলনায় বেশি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হতে পারে। প্রেসিডেন্ট সতর্ক করেছেন, শাটডাউনের পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা বিরোধী দলের জন্য অসুবিধাজনক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী সংস্থাগুলোর জন্য প্রতিবছর ব্যয়–সংক্রান্ত আইন কংগ্রেস তৈরি করে থাকে। তবে নতুন অর্থবছরের শুরু হওয়ার আগে প্রায়শই আইনটি সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে। এই ফাঁক পূরণ করতে আইনপ্রণেতারা সাধারণত অস্থায়ী ব্যয় বিল পাস করেন, যাতে সরকার কয়েক সপ্তাহ বা মাসের জন্য সচল থাকে। এবার অস্থায়ী ব্যয় বিলের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একমত না হওয়ায় সরকার আংশিক শাটডাউনের কবলে পড়েছে। এর অর্থ হলো সরকারের কিছু অংশ অর্থ অভাবে কার্যক্রম বন্ধ রাখবে।
যদিও আংশিক শাটডাউনের কারণে কিছু খাতে কার্যক্রম সীমিত হবে, তবে সামাজিক সুরক্ষা প্রশাসন অবসর ও প্রতিবন্ধী ভাতা চালু রাখবে। এই সংস্থার কর্মীদের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশকে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হবে। ব্যবসায়িক প্রচার কার্যক্রমও স্থগিত থাকবে। মেডিকেয়ার ও মেডিকএইডের অর্থায়ন অব্যাহত থাকবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের বৃহত্তম খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি এসএনএপি এবং নারী, শিশু ও নবজাতকদের জন্য বিশেষ পুষ্টি কর্মসূচি ডব্লিউআইসি শাটডাউনের সময় কার্যক্রম চালু রাখবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংস্থা (আইআরএস) প্রথম পাঁচ দিন তাদের কর্মীদের নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে। তবে শাটডাউন পাঁচ দিনের বেশি স্থায়ী হলে পরবর্তী পরিকল্পনা জানায়নি তারা।
কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৩ হাজারের বেশি বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকর্মী কাজ চালিয়ে যাবেন, তবে শাটডাউন চলাকালীন তাদের বেতন পাওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ২০ লাখ সামরিক কর্মীও দায়িত্ব পালন করবেন, কিন্তু শাটডাউনের সময় বেতন পাবেন না। ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা বিভিন্ন শহরে মোতায়েন থাকবেন এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ক্রয় অর্ডার দেওয়া যেতে পারে।
শাটডাউনের সময় অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, যেমন জিডিপি এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ স্থগিত থাকবে। ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসন তাদের কর্মীদের ২৪ শতাংশকে ছুটিতে পাঠাবে এবং নতুন ঋণ বা সরঞ্জাম ক্রয় এবং ভবন উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ রাখবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য তহবিলের মাধ্যমে কার্যক্রম চালু থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা প্রায় ২৩০ কোটি ডলার তহবিল ব্যবহার করতে পারবে, এবং সংস্থার প্রায় ৪ হাজার কর্মী সাময়িক ছুটিতে থাকবে। এফবিআই, মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রশাসন, কোস্ট গার্ড এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা সংস্থা কাজ চালিয়ে যাবেন।