ওয়াশিংটন, ১০ অক্টোবর — যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগে বড় ধরনের ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বিভাগটি ৪৬০ জনেরও বেশি কর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে, যা মোট কর্মীসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানে হিমশিম খাওয়া এই সংস্থার জন্য এটি এক বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।
ন্যায়বিচার বিভাগের এক আদালত নথির মাধ্যমে একই দিনে এই তথ্য জানা যায়। এর আগে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছিল, সরকারে চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে বিভিন্ন বিভাগে ব্যাপক ছাঁটাই হবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই পদক্ষেপ কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অংশ, যাতে তারা দ্রুত সরকার পুনরায় চালুর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে রাজি হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্যনীতি ও অভিবাসন ইস্যুতে অচলাবস্থায় থাকা কংগ্রেস এখনো পর্যন্ত বাজেট বিল পাস করতে পারেনি।
নতুন করে হওয়া এই ছাঁটাই শিক্ষা বিভাগের কর্মীবাহিনীর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ কমিয়ে দিয়েছে। মার্চ মাসেও এক দফা বড় ধরনের ছাঁটাই হয়েছিল, যেখানে ক্রয়বোনাস, স্বেচ্ছা অবসর এবং সরাসরি চাকরিচ্যুতির মাধ্যমে বিভাগটির অর্ধেক কর্মী বাদ দেওয়া হয়। আদালতে এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ হলেও, সর্বোচ্চ আদালত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাঁটাই প্রক্রিয়া চালু রাখার অনুমতি দেয়।
ফলস্বরূপ, দেশজুড়ে শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ঋণ, স্কুল পর্যবেক্ষণ এবং নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সম্পর্কিত কার্যক্রমে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরীণ কর্মী সংগঠন “AFGE Local 252” জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যোগাযোগ ও আউটরিচ দপ্তরের স্টেট ও লোকাল এনগেজমেন্ট টিম। এছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের প্রায় পুরো কর্মীই ছাঁটাই হয়েছেন। এই দপ্তরটি সাধারণত রাজ্যগুলোর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পড়া-লেখার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে।
শিক্ষা বিভাগ কর্মীদের ইউনিয়নের সভাপতি ও সাবেক কর্মকর্তা র্যাচেল গিটলম্যান এই ছাঁটাইকে “অবৈধ” বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, “একটি ইতিমধ্যেই সীমিত জনবল সম্পন্ন সংস্থাকে আরও দুর্বল করে ফেলা একেবারেই অযৌক্তিক।”
তিনি বলেন, “মার্চ মাসে প্রশাসন এক হাজারেরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কর্মীকে ছাঁটাই করেছিল, যাদের দায়িত্ব আইন দ্বারা নির্ধারিত ছিল। এরপর থেকে আমরা দেখছি, বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ বারবার অন্যদের দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে।”
এদিকে, মে মাসে এক কংগ্রেসীয় শুনানিতে শিক্ষা সচিব লিন্ডা ম্যাকমোহন স্বীকার করেছিলেন যে, আগের দফার ছাঁটাই হয়তো অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাঁর ভাষায়, “যখন কোনো সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়, তখন ধারণা থাকে শুধু অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ যাবে। কিন্তু মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় অংশও কেটে ফেলা হয়, সেটা পরবর্তীতে বুঝতে পারি এবং পুনরায় নিয়োগ দিতে হয়।”
ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই শিক্ষা বিভাগ নীরবে বেশ কয়েকজন কর্মীকে পুনর্বহাল করেছিল বলে জানা যায়। এরপরও জনবল ঘাটতি পূরণে নতুন করে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
বর্তমানে সরকারি অচলাবস্থার কারণে শিক্ষা বিভাগের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী সাময়িক বরখাস্ত বা “ফার্লো” অবস্থায় রয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা কার্যক্রম, আর্থিক সহায়তা এবং প্রশাসনিক সেবাগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এই ছাঁটাই শিক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং নীতিনির্ধারণে গভীর প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাখাত এমনিতেই রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও বাজেট সংকটে ভুগছে, সেখানে এই সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে বলে মনে করছেন তারা।



