যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে রাশিয়ায় নতুন করে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় তৎপরতা শুরু হয়েছে। দেশটির নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই মন্ত্রিসভা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে পারমাণবিক প্রস্তুতির সম্ভাব্য পরিকল্পনা তৈরি করা যায়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বৈঠকে স্পষ্ট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষা রাশিয়ার জন্য “সরাসরি সামরিক হুমকি” হিসেবে বিবেচিত হবে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, পারমাণবিক প্রতিরক্ষা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে, যাতে প্রতিপক্ষ কোনো ধরণের আক্রমণে অগ্রহণযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, প্রয়োজনে আর্কটিক অঞ্চলের নভায়া জেমলিয়ার পরীক্ষাকেন্দ্রকে দ্রুত পরীক্ষার উপযোগী করে তোলা সম্ভব।
এই সতর্কবার্তা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা অর্জন করেছে। রাশিয়ার জেনারেল স্টাফ প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের জবাব দেওয়ার সুযোগ রাশিয়ার জন্য সীমিত হয়ে যাবে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়া আর কোনো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়নি। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত উত্তেজনা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পদক্ষেপ এবং আগের বছরের ‘বুরেভেস্তনিক’ নামের পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা বেড়েছে। এই মিসাইল পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এবং এর পরীক্ষা রাশিয়ার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তিন দশকেরও বেশি সময় পরে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে দুই পরাশক্তির নতুন তৎপরতা বিশ্বের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার নাজুক অবস্থাকে আরও উন্মুক্ত করেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তি সংক্রান্ত আলোচনাগুলো এই পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তারা সতর্ক করে বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা ও প্রস্তুতি নিয়ে এমন প্রতিযোগিতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে এটি শুধু প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়াবে না, বরং বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেও সংকুচিত করবে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আরও মন্তব্য করেছেন, এমন উত্তেজনার মধ্যে দ্রুত এবং সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির কার্যকারিতা বিপন্ন হতে পারে। দুই পরাশক্তির মধ্যকার পারমাণবিক পরীক্ষার সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক পর্যটক, ব্যবসায়ী এবং কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একবার আরও সতর্ক করে দিয়েছে যে, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বা পরীক্ষা শুধু প্রতিপক্ষকে নয়, পুরো বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়।



