যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত কর্মী খালিলের ওপর আরোপিত ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা তুলে নিয়েছেন। এর ফলে তিনি এখন দেশজুড়ে বিভিন্ন সভা–সমাবেশ ও কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন, একই সঙ্গে নির্বাসন মামলার লড়াইও চালিয়ে যেতে পারবেন।
খালিল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন করে আসছেন। গত জুনে লুইজিয়ানার একটি অভিবাসন কেন্দ্র থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই তাঁর ওপর বেশ কিছু ভ্রমণ সীমা আরোপ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, তিনি কেবল নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, ওয়াশিংটন ডিসি, লুইজিয়ানা ও মিশিগান রাজ্যের মধ্যেই চলাফেরা করতে পারতেন।
এরপর তাঁর আইনজীবী বিচারকের কাছে আবেদন করেন এই সীমাবদ্ধতা প্রত্যাহারের জন্য। ভার্চুয়াল শুনানিতে আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেল মৌলিক অধিকার প্রয়োগের জন্য, বিশেষ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্বার্থে, দেশজুড়ে ভ্রমণ করতে চান। তিনি জনস্বার্থের নানা বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য রাখতে চান, যা এই মামলার মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গেও সম্পর্কিত।
সরকারের পক্ষের আইনজীবী অবশ্য এ আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি যুক্তি দেন, খালিল চাইলে এসব সভা বা আলোচনায় অনলাইনে অংশ নিতে পারতেন, এজন্য সরাসরি ভ্রমণের প্রয়োজন নেই।
তবে বিচারক মামলার যুক্তি বিবেচনা করে বলেন, খালিল পালানোর ঝুঁকিতে নেই এবং মুক্তির পর থেকে কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেননি। তাই তাঁর ভ্রমণে বাধা দেওয়ার যুক্তি নেই। বিচারক শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেন, খালিল ভ্রমণের আগে অবশ্যই মার্কিন অভিবাসন ও কাস্টমস দপ্তরকে জানাতে হবে।
খালিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। গত মার্চে তাঁকে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করে—যা সাবেক প্রশাসনের সময় শুরু হওয়া প্রো–ফিলিস্তিনি কর্মীদের ওপর কঠোর নজরদারির অংশ বলে মনে করা হয়।
তাঁর এই গ্রেপ্তারের সময়ই প্রথম সন্তানের জন্ম হয়, কিন্তু বন্দিদশার কারণে তিনি সেই মুহূর্তে উপস্থিত থাকতে পারেননি। পরে জুনে এক ফেডারেল বিচারক তাঁকে মুক্তি দেন।
এদিকে গত মাসে লুইজিয়ানার এক অভিবাসন আদালত রায় দেয় যে, খালিলকে দেশে ফেরত পাঠানো যেতে পারে, কারণ তিনি গ্রিন কার্ডের আবেদনপত্রে কিছু তথ্য গোপন করেছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁর আইনজীবীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আপিল করেছেন এবং তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনি অধিকার রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই মামলাটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সীমারেখা নিয়ে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। একদিকে কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা নীতি, অন্যদিকে নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন—এই দুইয়ের সংঘাতের মাঝেই খালিলের মতো অনেক কর্মী আজ তাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে রয়েছেন।



