Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনযুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কমছে অভিবাসী পরিবারের শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কমছে অভিবাসী পরিবারের শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিদ্যালয়গুলোতে এ বছর অভিবাসী পরিবারের শিশুদের ভর্তিতে লক্ষণীয় পতন দেখা যাচ্ছে। মায়ামি থেকে সান ডিয়েগো—প্রায় সব জায়গায় একই বাস্তবতা। দীর্ঘদিন ধরে যে সব স্কুলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য, সেখানে এখন নতুন করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী প্রায় নেই বললেই চলে।

অনেক অভিভাবককে দেশত্যাগের আদেশের মুখোমুখি হতে হয়েছে, কেউ কেউ নিজ উদ্যোগেই নিজ দেশে ফিরে গেছেন। সাম্প্রতিক অভিবাসন কঠোরতার কারণে কিছু পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অন্যত্রও সরে গেছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ—বিদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে পরিবার আসা এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে ছোট-বড় সব ধরনের স্কুলেই নতুন আগন্তুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় তুলনামূলকভাবে খুবই কম।

মায়ামি-ডেড কাউন্টির স্কুলগুলোতে চলতি শিক্ষাবর্ষে মাত্র প্রায় ২ হাজার ৫৫০ শিক্ষার্থী বিদেশ থেকে এসেছে। যেখানে গত বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ হাজার এবং তার আগের বছর ২০ হাজারেরও বেশি। এই পতনের কারণে জেলাটির বার্ষিক বাজেট থেকে প্রায় ৭ কোটি ডলার কমে গেছে, যা হঠাৎ করে বড় ধরনের আর্থিক সংকট তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পাবলিক স্কুল দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি সংকটে ভুগছে—জন্মহার কমে যাওয়া, প্রাইভেট স্কুল-হোমস্কুলিংয়ের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে সামগ্রিক ছাত্রসংখ্যাই কমছে। কিন্তু অভিবাসী শিশুদের আগমন অন্তত কিছুটা হলেও সেই ঘাটতি পূরণ করত। বিশেষ করে ভাষা শিক্ষা ও সহায়তা সেবার প্রয়োজন থাকলেও তারা প্রতি শিক্ষার্থীর ভিত্তিতে যে অর্থ নিয়ে আসে, তা স্কুলগুলোকে স্থিতিশীল রাখত। এবার সেই ভরসাটাই নষ্ট হয়ে গেছে।

উত্তর আলাবামার একটি জেলা যেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় শিল্পকারখানার কারণে হিস্পানিক জনগোষ্ঠী স্থায়ী হয়েছে, সেখানেও নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি বলেই জানানো হয়েছে। এই অভিবাসন কমে যাওয়ার ফলে বাজেট সংকট এতটাই গভীর হয়েছে যে অন্তত ডজনখানেক শিক্ষক পদ বাতিল করার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে কিছু পরিবার পুরোপুরি দেশত্যাগও করছে। ফ্লোরিডার লেক ও Worth এলাকাতে এক অভিবাসী মা গ্রেফতার হলে তার সাত সন্তানের দায়িত্ব কিছুদিনের জন্য এক নিকটাত্মীয় গ্রহণ করেন। কয়েক সপ্তাহ স্কুলে যাওয়ার পর সকল সন্তানই শেষ পর্যন্ত বিমানে করে নিজ দেশে ফিরে যায়। এমন অনেক পরিবারই যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলজীবন ছেড়ে আবারও নিজেদের দেশের অনিশ্চিত বাস্তবতায় ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।

গ্রীষ্মকালেই বিভিন্ন স্কুলে নিবন্ধন সংখ্যা কমতে শুরু করে। ডেনভারের একটি স্কুল জেলা গত বছর যেখানে ১,৫০০ নতুন আগন্তুক শিক্ষার্থী পেয়েছিল, এ বছর সে সংখ্যা মাত্র ৪০০। টেক্সাসের একটি জেলা তো ‘নিউকামার স্কুল’ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, কারণ গত বছরের ১১১ শিক্ষার্থীর জায়গায় এ বছর ভর্তি ছিল মাত্র ২১।

বস্টনের পাশে চেলসিয়া শহর—দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসীদের অন্যতম কেন্দ্র—সেখানেও এবার চিত্র একেবারে ভিন্ন। গত বছর যেখানে ৫৯২ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, সেখানে এই বছর মাত্র ১৫২ জন। আরও উদ্বেগজনক বিষয়—এ বছর অনেক শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিবাসন কর্তৃপক্ষের অবস্থান ও অভিযানের খবর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় তৈরি করছে।

অন্যদিকে, সান ডিয়েগোর একটি স্কুলে গত দুই বছর ধরে ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বহু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। শিক্ষকরা তাদের মানিয়ে নিতে সহায়তা করছিলেন। কিন্তু চলতি বছর সেখানে একজনও নতুন আগন্তুক ভর্তি হয়নি। এতে শুধু শিক্ষার ক্ষতি নয়, সামাজিকীকরণের সুযোগও কমে যাচ্ছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

একজন মা জানিয়েছেন, তিনি নিজেকে যতটা সম্ভব আড়ালে রাখেন, তবুও সন্তানদের স্কুলে পাঠানো ছাড়া উপায় নেই। প্রতিদিন পথ চলতে চলতেই তিনি আতঙ্কে থাকেন—পেছনে কেউ নজর রাখছে কি না।

সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বহু স্কুল এই অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অভিবাসী শিক্ষার্থীরা শুধু শ্রেণিকক্ষ পূর্ণ করত না—তারা বহু জেলায় শিক্ষার ধারাবাহিকতা ও আর্থিক স্থিতিশীলতার অন্যতম ভিত্তি ছিল। এবার সেই ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments