যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন ও ওয়েলসের নিউপোর্ট শহরে চারটি বাড়ির মালিকানা রয়েছে পাবনা জেলার বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এস এম আসিফ শামসের নামে। এর মধ্যে কিছু সম্পত্তি তিনি নিজের নামে এবং কিছু তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নামে নিবন্ধিত করেছেন। আসিফ শামস সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকারের পুত্র।
প্রাপ্ত নথিপত্র অনুযায়ী, পূর্ব লন্ডনের কুইনম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে মাগেলান হাউসে একটি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। এছাড়া ওয়েলসের নিউপোর্ট শহরের সাউথ মার্কেট স্ট্রিটে দুটি এবং পটার স্ট্রিটে একটি বাড়ির মালিকানা তাঁর।
ল্যান্ড রেজিস্ট্রেশন দপ্তরের তথ্য বলছে, মাগেলান হাউসের দুই কক্ষবিশিষ্ট ফ্ল্যাটটি তিনি ২০১৩ সালের আগস্টে ২ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড দিয়ে নিজ নামে কিনেছিলেন। অন্যদিকে নিউপোর্টের পর্টার স্ট্রিটে অবস্থিত চার কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটি তিনি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৭১ হাজার পাউন্ডে কিনেন। একই বছরের জুনে সাউথ মার্কেট স্ট্রিটের প্রথম বাড়িটি ৯৫ হাজার পাউন্ডে এবং ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একই এলাকায় দ্বিতীয় বাড়িটি ১ লাখ ২২ হাজার পাউন্ডে ক্রয় করেন। এই তিনটি বাড়িই হোমওয়ার্ড প্রোপার্টি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধিত।
জুপলার নামের অনলাইন রিয়েল এস্টেট প্ল্যাটফর্মের তথ্যমতে, উল্লিখিত চারটি বাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৮ লাখ ৩০ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি।
যুক্তরাজ্যের সরকারি প্রতিষ্ঠান কোম্পানি হাউসের নথিপত্র বলছে, হোমওয়ার্ড প্রোপার্টি লিমিটেডের একক পরিচালক হিসেবে এস এম আসিফ শামসের নাম রয়েছে। তবে তাঁর স্ত্রী, যিনি যুক্তরাজ্য মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী হিসেবেও পরিচিত, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির সেক্রেটারি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এই কোম্পানিটি ২০১৬ সালে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা হিসেবে নিবন্ধিত হয়।
এছাড়াও, আসিফ শামসের নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘আসনা এন্টারপ্রাইজ ইউকে লিমিটেড’ নিবন্ধিত আছে, যা ২০১০ সালে নিবন্ধিত হয়েছিল। পাশাপাশি তিনি অতীতে আরও চারটি কোম্পানির পরিচালক ছিলেন, তবে বর্তমানে সেগুলো বিলুপ্ত।
রাজনীতির সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০২১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে নির্বাচনী হলফনামায় যুক্তরাজ্যে থাকা এসব সম্পদের কোনো উল্লেখ ছিল না।
এর আগে তাঁর নাম রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগেও উঠে আসে। ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান থাকাকালে ১৯১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে মামলা হয়। ওই মামলায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও তা কার্যকর হয়নি দীর্ঘ সময়। পরবর্তীতে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। এর পরপরই তিনি বিদেশে চলে যান।
বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি তাঁকে ট্রাফালগার স্কয়ারে আয়োজিত এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা গেছে। তবে তাঁর বিপুল পরিমাণ সম্পদের উৎস সম্পর্কিত প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। মুঠোফোন কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।