মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি এক বিরল সমাবেশে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘মোটা জেনারেল’ এবং বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগের কারণে কয়েক দশক ধরে মার্কিন সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাঁর মতে, যে কর্মকর্তারা এই নতুন কর্মসূচির সঙ্গে একমত নন, তাঁদের উচিত সম্মানজনকভাবে পদত্যাগ করা।
ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকোতে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্টও। তিনি কমান্ডারদের উদ্দেশে বলেন, মার্কিন শহরগুলোকে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ নেওয়া যেতে পারে। অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ও প্রেসিডেন্টের মন্তব্য অনেকের কাছে টেলিভিশন শো-এর মতো মনে হয়েছে। কারণ, অল্প সময়ের নোটিশে হঠাৎ করেই এই সমাবেশ ডাকা হয়েছিল।
সমাবেশে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘অতীতে নির্বোধ ও বেপরোয়া রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেনাবাহিনীকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। আমরা ‘অতিরিক্ত প্রগতিশীল বিভাগের’ মতো হয়ে পড়েছিলাম। তবে সেই সময় শেষ।’’ তিনি আরও জানান, যেসব কর্মকর্তা সামরিক শৃঙ্খলা ও সংস্কৃতিকে দুর্বল করেছেন, তাঁদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বরখাস্তদের মধ্যে ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ এক শীর্ষ জেনারেল এবং নৌবাহিনীর এক নারী অ্যাডমিরাল।
তিনি জানান, পেন্টাগনের অভ্যন্তরে বৈষম্যের অভিযোগ ও তদন্তের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। এখনকার পরিস্থিতিতে কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়, যা কার্যকর নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘‘আমার বক্তব্য যদি আপনাদের ভারাক্রান্ত করে, তবে পদত্যাগ করুন।’’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও যোগ করেন, সামরিক করিডোরে ‘মোটা জেনারেল’ ও শারীরিকভাবে অযোগ্য কর্মকর্তাদের থাকা গ্রহণযোগ্য নয়। সব ধরনের ফিটনেস টেস্ট পুরুষদের মানদণ্ডে নির্ধারিত হবে। তিনি চেহারায় পেশাদারিত্ব বজায় রাখার ওপরও জোর দেন। তাঁর ভাষায়, ‘‘অপেশাদার চেহারার যুগ শেষ। শ্মশ্রুমণ্ডিত থাকা চলবে না।’’
সমাবেশ চলাকালীন শীর্ষ কর্মকর্তারা মূলত নীরব ছিলেন। তবে ডেমোক্র্যাটরা সমালোচনা করে জানিয়েছে, এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে গভীরভাবে দলীয় রাজনীতির মধ্যে টেনে আনা হচ্ছে। তাঁদের মতে, যোগ্যতা ও সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
একই অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁর বক্তব্য পছন্দ না হলে কর্মকর্তারা হলরুম ছাড়তে পারেন, তবে তাতে তাঁদের পদমর্যাদা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়বে। তিনি স্পষ্ট করে জানান, সবকিছুই যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে, রাজনৈতিক কারণে কোনো পদে কাউকে বসানো হবে না।
প্রেসিডেন্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘‘আমি আপনাদের পাশে আছি, শতভাগ সমর্থন দিচ্ছি।’’ তবে তাঁর বক্তব্য চলাকালে কর্মকর্তারা অভিব্যক্তিহীন মুখে নীরবে বসেছিলেন।
এদিকে, অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যয় কত হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের শাটডাউনের ঠিক আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিশ্বব্যাপী শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সমবেত হওয়ার নির্দেশ দেন।
ট্রাম্প প্রশাসনে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পেন্টাগনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা, একাডেমি গ্রন্থাগার থেকে বই নিষিদ্ধ করা, ভেনেজুয়েলার উপকূলে মাদকবাহী নৌকার ওপর প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেওয়া—এসব পদক্ষেপ ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিরক্ষা দপ্তরের নাম পরিবর্তন করে ‘যুদ্ধ দপ্তর’ রাখার একটি নির্বাহী আদেশেও স্বাক্ষর করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন শহরে ন্যাশনাল গার্ড ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর মতে, মার্কিন শহরগুলো এখন অভ্যন্তরীণ আক্রমণের শিকার, যা বিদেশি শত্রুর আক্রমণের চেয়ে জটিল। কারণ, এই আক্রমণকারীদের কোনো ইউনিফর্ম নেই।
তবে এই বক্তব্যের সমালোচনাও হয়েছে প্রবলভাবে। অনেকেই বলছেন, দেশের নাগরিকদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা এবং তাঁদের ‘নির্মূল করার’ বার্তা দেওয়া গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করছে।