মানব মস্তিষ্ক একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ, যা বিভিন্ন স্তরের সুরক্ষামূলক আবরণ দ্বারা ঘেরা। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘মেনিনজিস’। এই মেনিনজিসে প্রদাহ দেখা দিলে সেটিকে বলা হয় মেনিনজাইটিস। এটি একটি জটিল ও কখনও কখনও প্রাণঘাতী রোগ, যা সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা যক্ষ্মার জীবাণুর সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। বয়স, শারীরিক অবস্থা ও পরিবেশগত কারণ অনুসারে এর সংক্রমণ ভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভাইরাসজনিত মেনিনজাইটিসের প্রাদুর্ভাব কিছুটা বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ।
সংক্রমণের কারণ ও ছড়িয়ে পড়ার উপায়
মেনিনজাইটিসের সংক্রমণ সাধারণত নাক, কান বা গলার সংক্রমণ থেকে শুরু হয়। এসব স্থানে জীবাণু প্রবেশ করে মস্তিষ্কের কাছাকাছি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মেনিনজাইটিস দেখা দিতে পারে। দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লাগলে, বিশেষ করে যখন খুলির ভেতরের প্রতিরক্ষা স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখনও জীবাণু সহজে মস্তিষ্কে পৌঁছে যেতে পারে।
এছাড়াও শরীরের অন্য কোনো অংশে সংক্রমণ হলে, তা রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে মেনিনজাইটিসের সৃষ্টি করতে পারে। তাই যেকোনো সংক্রমণ অবহেলা না করে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
লক্ষণ ও সতর্ক সংকেত
মেনিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র মাথাব্যথা। তবে এটি একমাত্র লক্ষণ নয়। অনেক সময় এর সঙ্গে দেখা দেয়—
-
উচ্চ জ্বর
-
ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
-
শরীরে র্যাশ বা লাল দাগ
-
অস্থিরতা বা বিভ্রান্তি
-
আলোতে চোখে ব্যথা
-
শিশুর ক্ষেত্রে খাওয়ায় অনীহা বা অতিরিক্ত কান্না
তবে সব রোগীর ক্ষেত্রে একইভাবে লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে চিহ্নিত না হলে রোগ দ্রুত জটিল আকার ধারণ করে।
মেনিনজাইটিসের জটিলতা
মেনিনজাইটিস একটি গুরুতর অবস্থা। মস্তিষ্কের সুরক্ষাকারী আবরণে প্রদাহ দেখা দিলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ভাইরাসজনিত মেনিনজাইটিস সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাপোর্টিভ চিকিৎসায় রোগী অনেক সময় সুস্থ হয়ে ওঠেন।
কিন্তু ব্যাকটেরিয়াল বা যক্ষ্মাজনিত মেনিনজাইটিস অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ ধরনের সংক্রমণে মস্তিষ্কের চারপাশে থাকা তরলের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে। ফলস্বরূপ মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়, মস্তিষ্ক ফুলে ওঠে এবং রোগীর চেতনা নষ্ট হয়ে কোমায় চলে যেতে পারে।
যক্ষ্মাজনিত মেনিনজাইটিস সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি এবং চিকিৎসা না নিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
মেনিনজাইটিস প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ। বিশেষ করে নাক, কান, গলা ও মুখের যেকোনো সংক্রমণ দ্রুত চিকিৎসা করানো জরুরি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
মাথায় আঘাত লাগলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত, কারণ খোলা আঘাত বা ফাটল থাকলে জীবাণু সহজে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে।
রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ শুরু করা উচিত। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পর্যবেক্ষণে থাকা প্রয়োজন হতে পারে।
উপসংহার
মেনিনজাইটিস এমন একটি রোগ, যা সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা, সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হতে পারে সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।



