মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ওয়াহাকায় যাত্রীবাহী একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। একই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৯৮ জন। হতাহতের এই সংখ্যা দেশটিতে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং রেলপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
গতকাল রোববার দেশটির নৌবাহিনী জানায়, নিজান্দা শহরের কাছাকাছি এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার ট্রেনটিতে মোট ৯ জন কর্মী এবং ২৪১ জন যাত্রী ছিলেন। হঠাৎ করেই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে, যার ফলে কয়েকটি বগি উল্টে যায় এবং যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
নৌবাহিনীর তথ্যমতে, ১৩৯ জন যাত্রীকে প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তাঁদের মধ্যেও ৩৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় রাষ্ট্রপ্রধান জানান, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারকে সহায়তা দিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন এবং পরিস্থিতি সরাসরি তদারক করছেন। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ওয়াহাকা অঙ্গরাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, এই দুর্ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো সরকারের দায়িত্ব। তাঁর মতে, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
দুর্ঘটনার পর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। উদ্ধারকাজ চলাকালে রেললাইনটির ওই অংশে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থল পরিষ্কার এবং রেললাইনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু হয়েছে।
দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা হবে। তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা হবে এবং কোনো ধরনের অবহেলা বা কারিগরি ত্রুটি থাকলে তা চিহ্নিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই দুর্ঘটনার পর মেক্সিকোতে রেলপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা তদারকি এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হলে বিদ্যমান নীতিমালা পর্যালোচনা করা হবে।
সব মিলিয়ে ওয়াহাকার এই দুর্ঘটনা মেক্সিকোর পরিবহন ব্যবস্থার জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিহতদের পরিবার ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে।



