মেক্সিকোর রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ে এক ভিন্নধর্মী আলোচনার জন্ম দিয়েছে এক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে হাতিয়ার বানিয়ে তিনি দেশটির প্রভাবশালী রাজনীতিকদের জীবনযাত্রার চিত্র সামনে আনছেন। মূলত তিনি প্রশ্ন তুলছেন—সরকারি বেতনের আয়ে কিভাবে এতো বিলাসবহুল জীবনযাপন সম্ভব?
তার কাজের ধরন অনেকটা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কৌতূহলকে ভাষা দেয়ার মতো। কোনো রাজনীতিক দামি ব্র্যান্ডের পোশাক, বিলাসবহুল গাড়ি কিংবা উচ্চমূল্যের সামগ্রী ব্যবহার করলে তিনি সেটি তুলে ধরেন নিজের সামাজিক প্ল্যাটফর্মে। ফলে সাধারণ নাগরিকরাও হয়ে উঠছেন একপ্রকার ‘ফ্যাশন পুলিশ’, যারা বিভিন্ন ছবি বা তথ্য পাঠিয়ে দেন সেই শিক্ষককে। এভাবে ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তুলেছেন এক শক্তিশালী অনলাইন অনুসারী গোষ্ঠী।
তার অনুসারীর সংখ্যা ইতোমধ্যেই লাখ ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে তার জনপ্রিয়তা হঠাৎই বেড়ে যায়। কারণ সেই সময়টাতে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক অসন্তোষ আরও প্রকট হয়ে ওঠে। অনেকে মনে করেন, রাজনীতিকদের জীবনযাত্রা ও তাদের সরকারি আয়ের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, তা দুর্নীতির শেকড় গভীর হওয়ারই প্রমাণ বহন করে।
তবে এই কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনারও অভাব নেই। কয়েকজন রাজনীতিক প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, এমনকি এটিকে ‘অপমানজনক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন, তার এই কর্মকাণ্ড নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তিনি বিরোধী পক্ষের হয়ে কাজ করছেন।
অন্যদিকে শিক্ষক নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করে জানান, তার অনুপ্রেরণা এসেছে দুর্নীতিবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণের টাকায় রাজনীতিকরা দায়বদ্ধ থাকবেন, সেটিই প্রতিষ্ঠা করা তার লক্ষ্য।
এমন প্রচেষ্টা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। তারা বুঝতে পারছেন, রাজনীতিকদের আসল মুখোশ উন্মোচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কতটা কার্যকর হতে পারে। একদিকে রাজনীতিকদের অস্বস্তি বাড়ছে, অন্যদিকে জনগণ পাচ্ছেন নিজেদের কণ্ঠ প্রকাশের এক নতুন প্ল্যাটফর্ম।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মেক্সিকোতে এ ধরণের সামাজিক চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ অনেক পুরোনো, কিন্তু প্রযুক্তি ও সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এখন তাদের হাতে এনে দিয়েছে সরাসরি প্রতিরোধের অস্ত্র।
সামগ্রিকভাবে, এক শিক্ষকের এই উদ্যোগ প্রমাণ করছে যে, কেবল রাজনৈতিক বক্তৃতা নয়—বাস্তব উদাহরণই জনগণের সামনে দুর্নীতির চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারে। আর এর মাধ্যমেই গণমানুষের আস্থা ফিরে পাওয়া সম্ভব।