যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যে ঘটেছে এক অভাবনীয় ঘটনা। প্রতিদিনের মতোই চলছিল একটি মুদিদোকানের ব্যস্ত সময়, হঠাৎই দোকানের স্বয়ংক্রিয় দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে এক অপ্রত্যাশিত অতিথি—একটি কালো ভালুক। মুহূর্তের মধ্যেই দোকানের ভেতরে সৃষ্টি হয় চরম আতঙ্ক। ক্রেতা ও কর্মচারীরা কেউ ছুটে পালাচ্ছেন, কেউ আবার বিস্ময়ে সেই দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করছেন।
ঘটনাটি ঘটে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ওরো ভ্যালির একটি দোকানে। কয়েকদিন ধরেই এলাকার আশপাশে ভালুকটিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছিল। সোমবার সকালে সেটিকে দোকানের পেছনের অংশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বয়ংক্রিয় দরজার সামনে এসে সেটি ভেতরে প্রবেশ করে।
দোকানে ঢুকেই ভালুকটি দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেয়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি দোকানের ভেতরে কিছু খুঁজছিলেন, হঠাৎ মাথা তুলে তাকাতেই কয়েক ফুট দূরে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক কালো ভালুক। মুহূর্তেই তিনি ভয় পেয়ে সরে যান, আর ভালুকটিও দ্রুত অন্য দিকে ছুটে যায়।
খবর পৌঁছালে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে এবং নিরাপদে দোকানে উপস্থিত সকলকে বাইরে নিয়ে আসে। সৌভাগ্যক্রমে কেউ আহত হননি, দোকানের কোনো ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। তবে ভালুকটি দোকান থেকে বেরিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই দৃষ্টিসীমার বাইরে মিলিয়ে যায়।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, মরু অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় মাঝে মাঝে বন্য প্রাণী মানুষের বসতিতে চলে আসে, তবে কোনো ভালুকের মুদিদোকানে ঢুকে পড়া এই অঞ্চলের জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় নানা রকম কৌতুক ও আলোচনা। কেউ কেউ মজা করে বলেন, “হয়তো ফলমূল বা মধু কিনতেই এসেছিল ভালুকটি!”
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনা কৌতুকের নয়, বরং সতর্কবার্তা। মানুষ যত বেশি প্রাকৃতিক পরিবেশ দখল করছে, ততই বন্য প্রাণীদের আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে। ফলে ক্ষুধার টানেই অনেক প্রাণী এখন মানুষের বসতিতে চলে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উচিত হবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। দোকান বা জনবহুল এলাকায় বন্য প্রাণীর প্রবেশ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা, সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার জন্য বিশেষ টিম গঠন করা। একই সঙ্গে বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা ও পুনর্গঠনের উদ্যোগও নিতে হবে।
এই ঘটনাটি একদিকে যেমন মানব-প্রকৃতি সম্পর্কের ভঙ্গুরতা তুলে ধরে, অন্যদিকে আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা কেবল বন্যপ্রাণীর জন্য নয়, মানবজাতির নিরাপত্তার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।