মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ ৩৩ বছর বসবাস করার পর ৭৩ বছর বয়সী এক ভারতীয় নারীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী ও প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
১৯৯১ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে বাঁচতে দুই ছেলেকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় আসেন ওই নারী। আসার পর থেকে তিনি সেখানে বসবাস ও কাজ করছিলেন। আশ্রয়ের জন্য একাধিকবার আবেদন করলেও তা কোনোভাবেই মঞ্জুর হয়নি। বহুবার চেষ্টা সত্ত্বেও আশ্রয়ের অনুমতি না পেয়ে অবশেষে তিনি মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ বিভাগের (আইসিই) নজরে আসেন।
চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে আইসিই কর্মকর্তারা। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে জর্জিয়ার একটি আটক কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ২২ সেপ্টেম্বর তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। দীর্ঘ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পর হঠাৎ করেই এমনভাবে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়ায় তিনি পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সাথে সঠিকভাবে বিদায় জানাতেও পারেননি।
নারীর আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, আটক অবস্থায় তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ডাবল হাঁটু প্রতিস্থাপন থাকা সত্ত্বেও ওই নারীকে ৬০ থেকে ৭০ ঘণ্টা মেঝেতে ঘুমাতে বাধ্য করা হয়। যথাযথ খাবারও দেয়া হয়নি, ওষুধ খাওয়ার জন্য বরফ দেয়া হলেও পর্যাপ্ত পানীয় জল বা উপযোগী খাবার সরবরাহ করা হয়নি। এমনকি প্রদত্ত স্যান্ডউইচ খেতে না পারায় প্রহরীরা তার প্রতিই দায় চাপান।
২০০৫ সালেই অভিবাসন আদালত তার বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছিল। এরপর একাধিকবার আপিল করা হলেও প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা খারিজ হয়ে যায়। আইসিই কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেছেন, তাই আইন অনুযায়ী তাকে দেশে ফেরত পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে তিনি সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ার হারকিউলিস এলাকায় বসবাস করতেন এবং প্রায় দুই দশক ধরে একটি শাড়ির দোকানে দর্জির কাজ করতেন। নিয়মিত কর পরিশোধ করলেও আশ্রয় অনুমোদন না পাওয়ায় তিনি বৈধ কাগজপত্র পাননি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস পরপর তাকে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থিত হতে হতো। শেষবার চেক-ইনের জন্য গেলে সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ভারতে ফেরার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, “এভাবে হঠাৎ করে আটক করে ফেরত পাঠানো মানতে কষ্ট হচ্ছে। এতদিন এক দেশে থাকার পর যদি এভাবে বিদায় নিতে হয়, তারচেয়ে মৃত্যুই ভালো।”
ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় এ নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলছেন, অপরাধমূলক রেকর্ডবিহীন ব্যক্তিদের এভাবে আচরণ করা অন্যায় ও অমানবিক।
এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রতিবছর লাখো মানুষ দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন করে। বর্তমানে অভিবাসন আদালতে প্রায় ৩৭ লাখেরও বেশি মামলা বিচারাধীন। কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তারা “সবচেয়ে খারাপদের” দেশ থেকে ফেরত পাঠাতে চায়। তবে সমালোচকদের অভিযোগ, যারা অপরাধ করেননি এবং নিয়ম মেনে বারবার আবেদন করেছেন, তারাও এই কঠোর নীতির শিকার হচ্ছেন।