কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট তাঁর মার্কিন ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। তিনি স্পষ্ট করে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপ তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।
গত শুক্রবার নিউইয়র্কে ফিলিস্তিনপন্থী এক বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন কলম্বিয়ার এই প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, যেন তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশ না মেনে মানবতার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। তিনি বলেন, নিরীহ মানুষের ওপর অস্ত্র তাক করাটা মানবতার পরিপন্থী। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে, তাঁর ভিসা বাতিল করা হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট জানান, তাঁর আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কোনো ভিসা নেই, তবে এতে তাঁর কিছু যায়-আসে না। তিনি নিজেকে শুধু কলম্বিয়ার নয়, ইউরোপেরও নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, একজন বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তিনি স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করবেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানানোর কারণে তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ পদক্ষেপ প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র আর আন্তর্জাতিক আইনকে শ্রদ্ধা করছে না। অন্যদিকে ইসরায়েল সবসময় জাতি হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, তারা কেবলমাত্র আত্মরক্ষার জন্যই এই অভিযান চালাচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রায় পুরো উপত্যকা বাস্তুচ্যুত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, গবেষক এবং জাতিসংঘের এক তদন্তে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে জাতি হত্যার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের বাইরে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা উচিত, যার মূল কাজ হবে ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করা। একই সঙ্গে তিনি মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে অনুরোধ করেন, মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার না করে মানবিকতার পাশে দাঁড়াতে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে জানায়, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের বেপরোয়া ও উসকানিমূলক আচরণের কারণে তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, জাতিসংঘ তার সদস্য রাষ্ট্রের মতপ্রকাশের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করে থাকে। সেখানে ভিসা বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেওয়া কূটনৈতিক নীতির পরিপন্থী।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। চলতি বছরের শুরুতে কলম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত মানুষদের ফেরত পাঠানোর ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিলেও পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়।
চলতি বছরের জুলাইয়ে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁর দেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছেন। এ অভিযোগের পর দুই দেশই নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়। যদিও ওয়াশিংটন এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালে কলম্বিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং দেশটিতে কয়লা রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জটিল আকার ধারণ করে।