মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার এক খালে দীর্ঘ এক মাস ঘুরে বেড়ানোর পর অবশেষে ধরা পড়েছে একটি কুমির। গতকাল শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের চৌকিঘাট এলাকায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফাঁদ পেতে কুমিরটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন বিভাগের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, উদ্ধার করা কুমিরটি বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে কুমিরটি নিরাপদে রাখা হয়েছে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হচ্ছে।
স্থানীয় ও বন বিভাগের সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক মাস আগে কুমিরটি প্রথম দেখা যায় সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের চরবংখুরী ও পাশের হরিরামপুর উপজেলার হারুকান্দি ইউনিয়নের তন্ত্রখোলা এলাকার খালে। কুমিরটি দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেউ খালে গোসল করা তো দূরের কথা, গরু বা ছাগলকেও খালের পানিতে নামাতে সাহস পাননি।
স্থানীয়রা একাধিকবার কুমিরটি ধরার চেষ্টা করেন, কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হন। অবশেষে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চৌকিঘাট গ্রামের কয়েকজন তরুণ বিশেষ কৌশলে ফাঁদ পেতে সফল হন। কুমিরটি পানির ওপরে ভেসে উঠলে রশি দিয়ে তৈরি ফাঁদে সেটি আটকা পড়ে। এরপর স্থানীয়রা সাবধানে সেটিকে টেনে তীরে তুলে আনেন।
ঘটনার পর থেকেই আশপাশের এলাকা থেকে শত শত মানুষ কুমিরটি এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। কেউ ভিডিও করছেন, কেউ ছবি তুলছেন। এই দৃশ্য দেখতে ভিড় বাড়তে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত।
কুমির ধরতে অংশ নেওয়া গ্রামের দুই তরুণ জানান, সকালে তাঁরা কুমিরটিকে দেখতে পান এবং ফাঁদ পেতে রাখেন। রাত ১০টার দিকে কুমিরটি আবার পানির ওপরে উঠলে সেটি ফাঁদে আটকা পড়ে। তাঁরা জানান, এটি ধরতে বেশ সাহস এবং ধৈর্যের প্রয়োজন হয়েছিল।
বন বিভাগের কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি মিঠাপানির কুমির। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট। কুমিরটি বর্তমানে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আছে এবং বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ঘটনাস্থলের পথে রয়েছে। তারা পৌঁছানোর পর কুমিরটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কুমিরটি কোথা থেকে এসে খালে প্রবেশ করেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আশপাশের নদী বা জলাশয় থেকে এটি কোনোভাবে খালের মধ্যে এসে পড়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এমন দৃশ্য তাঁদের এলাকায় এই প্রথম দেখা গেল।
ঘটনার পর থেকে এলাকার মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। অনেকে জানিয়েছেন, দীর্ঘ এক মাস ধরে তারা আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। এখন কুমিরটি ধরা পড়ায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হবে।
এলাকাবাসীর দাবি, এমন পরিস্থিতি যাতে আবার না ঘটে, সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও মনে করিয়ে দিল, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হওয়ায় সেগুলো প্রায়ই মানুষের বসতি এলাকায় ঢুকে পড়ছে। প্রকৃতি ও প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে এমন ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে।



