Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যমানসিক প্রশান্তির চাবিকাঠি হতে পারে শরীরের লুকানো স্নায়ু “ভেগাস নার্ভ”

মানসিক প্রশান্তির চাবিকাঠি হতে পারে শরীরের লুকানো স্নায়ু “ভেগাস নার্ভ”

প্রতিদিনের ব্যস্ততা, মানসিক চাপ আর অবসাদে অনেকেই এখন কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চান। আশ্চর্যের বিষয়, মানবদেহের একটি স্নায়ু—ভেগাস নার্ভ—হয়তো সেই প্রশান্তির পথ খুলে দিতে পারে।

এই স্নায়ুটি মস্তিষ্ক থেকে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে সংকেত পাঠায় এবং সেখান থেকে তথ্য গ্রহণ করে। বেশিরভাগ মানুষই জানেন না এই স্নায়ু তাদের শরীরে কীভাবে কাজ করে, কিংবা এটিকে “ট্রেনিং” দেওয়া সম্ভব কিনা।

সোশ্যাল মিডিয়া ঘুরে দেখলে এখন অসংখ্য পরামর্শ চোখে পড়ে—কেউ বলছেন ভেগাস নার্ভকে “হিল” করা যায়, কেউ বলছেন “স্টিমুলেট” বা “রিসেট” করা যায়। এসবের লক্ষ্য একটাই—মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানো।

অনেকে কানে রাবারের ব্রাশ দিয়ে হালকা চাপ দিচ্ছেন, কেউ চোখ এদিক–ওদিক নাড়াচ্ছেন, কেউ শরীর ট্যাপ করছেন বা ওজনযুক্ত জ্যাকেট পরে পানি দিয়ে গার্গল করছেন—এগুলোই নাকি নার্ভটিকে সক্রিয় রাখার উপায়।

৩৫ বছরের নিচে তরুণদের মধ্যে বার্নআউট বা মানসিক অবসাদ বাড়ছে দ্রুত। ফলে এই ধরনের পদ্ধতিগুলো ভাইরাল হচ্ছে লক্ষ লক্ষ ভিউসহ।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এমন ভেতরের শক্তিশালী স্নায়ুকে কি সত্যিই “ট্রেনিং” দেওয়া সম্ভব?

একটি ক্ষুদ্র স্টুডিওতে যোগব্যায়ামের সেশনে অংশ নিয়ে প্রতিবেদক নিজেই বিষয়টি যাচাই করেছেন। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা নরম আলোয় হালকা সুরে হুম শব্দে গুনগুন করছিলেন। বলা হয়, এই হালকা হুম সুর শরীরের ভেতরে কম্পন তৈরি করে যা ভেগাস নার্ভকে সক্রিয় করতে সহায়ক। এর ফলে হৃদস্পন্দন ধীরে আসে, মন শান্ত হয়।

ইন্সট্রাক্টর জানান, গভীর শ্বাস, দোলানো নড়াচড়া, চোখের হালকা মুভমেন্ট ও শরীর ট্যাপ করার মতো প্র্যাকটিসগুলো নার্ভ সিস্টেমকে প্রশমিত করে। তবে এটি কোনো “ম্যাজিক কিওর” নয়—এটি ধীরে ধীরে শরীর ও মনের মধ্যে সংযোগ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া।

ভেগাস শব্দের অর্থ “ভ্রমণকারী”। এটি মস্তিষ্ক থেকে দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত হয়ে শরীরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন, হজম প্রভৃতি স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখে।

নার্ভ সিস্টেমের দুটি অংশ—

  • সিমপ্যাথেটিক সিস্টেম, যা “ফাইট অর ফ্লাইট” প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

  • প্যারাসিমপ্যাথেটিক সিস্টেম, যা ভেগাস নার্ভের মাধ্যমে শরীরকে শান্ত অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।

এদের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হলে মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, ভেগাস নার্ভকে উদ্দীপিত করার জন্য শরীরে স্থাপনযোগ্য বিশেষ যন্ত্র (ইমপ্লান্ট) ব্যবহার করা হয়, যা হালকা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পাঠিয়ে সেরোটোনিন ও ডোপামিন নিঃসরণে সাহায্য করে। এই যন্ত্র চিকিৎসাগতভাবে মানসিক বিষণ্ণতা ও স্নায়ুরোগে ব্যবহৃত হয়।

তবে বর্তমানে বাজারে “ওয়্যারেবল” ডিভাইসও এসেছে—যেগুলো গলায়, কানে বা বুকে লাগিয়ে বাহ্যিকভাবে নার্ভ উদ্দীপিত করা যায়। এদের দাম প্রায় ২০০ থেকে ১০০০ পাউন্ড পর্যন্ত। তবে এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে এখনও নিশ্চিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সীমিত।

একজন নারী, যিনি দীর্ঘদিন মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, জানান—এই ডিভাইসগুলো তাকে অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে। দিনে দুইবার মাত্র ১০ মিনিট ব্যবহার করলে মাথাব্যথা ও অস্থিরতা কমে যায় বলে তিনি জানান।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনো এটি গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। শরীরের জটিল স্নায়ুতন্ত্রের ভারসাম্য পুনঃস্থাপন একদিনে সম্ভব নয়। তবে যাদের হৃদরোগ বা শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা আছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।

বর্তমানে মানসিক সুস্থতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ভেগাস নার্ভকে কেন্দ্র করে নতুন এক চিকিৎসা ধারা গড়ে উঠছে। যারা এই প্র্যাকটিস করছেন, তারা বলছেন—নিজের শরীর ও মনের সম্পর্ক বুঝে নেওয়া এবং সেটিকে যত্ন নেওয়াই আসল “হিলিং”।


RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments